শাল্লায় সরকারি এক্স-রে মেশিন ১৮ বছর হলো বারান্দায়

শাল্লা প্রতিনিধি::
হাওরের দ্বীপ খ্যাত ভাটির জনপদ সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলা। অযতেœ অবহেলায় সরকারি এক্স-রে মেশিন প্রায় ১৮ বছর ধরে পড়ে আছে উপজেলার ৫০ শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বারান্দায়। সর্বদিকে অবহেলিত এ উপজেলায় স্বাস্থ্য সেবার মান উন্নয়নের লক্ষে ২০০৫ সালে প্রায় ১৯ লাখ টাকা মূল্যের এ মেশিনটি ক্রয় করে সরকার। এতো দামি মেশিনটি বারান্দায় থাকতে থাকতে নষ্ট হয়ে গেছে। সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় সাড়ে ৬ হাজার দিন সময় ধরে মেশিনটি অরক্ষিত, অযতেœ,অবহেলায় পড়ে রয়েছে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পুরাতন ভবনের দক্ষিণ ফটকের বারান্দায়। দীর্ঘদিন এক্স-রে মেশিন বক্সের ভেতরে প্যাকিং করা থাকলেও এখন সেটি আর সেই অবস্থায় নেই । বক্সটি ভেঙ্গে মেশিনের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ নানা জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। শুধু তাই নয় সেখানে রাখা হয়েছে বর্জ্য পদার্থ রাখার পাত্র। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ছাড়া আরো কোথাও এক্স-রে করার সুযোগ না থাকায় বিড়ম্বনায় পড়ে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা। বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও তাদের আত্মীয়-স্বজনদেরে বলতে শুনা যায় , সরকারের মাল বলেই এর কোন হিসাব নেই। এত টাকার গুরুত্বপূর্ণ এ মেশিন বহু বছর যাবত বারান্দায় থেকে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে যেন দেখার কেউ নেই । এই হাসপাতাল চালু হওয়ার পর থেকে আজ পর্যন্ত এক্স-রে মেশিনের সেবা চালু হয়নি । ১৮বছর আগে আসা এক্স-রে মেশিনটি এখনো কোন কাজে আসলো না অবহেলিত শাল্লাবাসীর। অথচ নাগরিকের মৌলিক অধিকার স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হাওর পাড়ের কয়েক লক্ষাধিক মানুষ। হাসপাতাল থাকলেও কোনো রকম পরীক্ষা-নিরিক্ষার ব্যবস্থা না থাকায় প্রত্যন্ত অঞ্চলসহ উপজেলাবাসী চরম ভোগান্তিতে পড়ছে স্বাস্থ্য সেবা নিয়ে। কোন রকম পরিক্ষা-নিরিক্ষার প্রয়োজন হলে ছুটতে হয় হবিগঞ্জের আজমিরিগঞ্জ নতুবা সুনামগঞ্জের দিরাইসহ জেলা কিংবা বিভাগীয় শহরে। উপজেলা সদর থেকে উভয় উপজেলার দুরত্ব প্রায় ২০ কিলোমিটার। হেমন্তে মোটরসাইকেল ও বর্ষায় নৌকা দিয়েই চলে রোগী আনা নেয়া। যত আশঙ্কাজনক রোগী হোক না কেন এর কোন বিকল্প নেই শাল্লার যোগাযোগ ব্যবস্থায়। খোঁজ নিয়ে জানা যায়,২০০৫ সালের মে মাসে ভাটি অঞ্চলের এ জনপদের মানুষের সঠিক স্বাস্থ্য সেবার জন্য এক্স-রে মেশিনটি সরবরাহ করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। মেশিন আসলে কি হবে,দেড় যুগেও সেটি কোন কক্ষে স্থাপন করা হয়নি।এক্স-রে মেশিন আসার পর এলাকার জনগনের মধ্যে আনন্দ দেখা দিয়েছিল, তারা ভেবেছিলো এবার চিকিৎসা সেবায় নতুন সংযোজন হলো। কিন্তু মানুষের সেই আশা আর পূরণ হয়নি এতো বছরেও। মেশিনটি সচল না হওয়ায় চিকিৎসা নিতে আসা লোকজন খুবই দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। অথচ চোখের সামনে এত টাকার একটি গুরুত্বপূর্ণ মেশিন নষ্ট হতে যাচ্ছে। এর সমাধনের জন্য কেউ কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না। সম্প্রতি শুনা যাচ্ছে একজন প্রকৌশলী এনে মেশিনটি ঠিকটাক করে কাজ লাগানোর চিন্তা করছে কর্তৃপক্ষ। ছাত্রলীগ নেতা মো.শামীম মিয়া বলেন,সরকারের এত টাকা মূল্যের মেশিনটি অনেক দিন এভাবে অযতেœ অবহেলায় পড়ে রয়েছে এটা খুবই দুঃখজনক। দ্রুততম সময়ের মধ্যে মেশিনটি চালু করে হাওর পাড়ের মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানাই। এবিষয়ে উপেজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার শশাঙ্ক ঘোষ বলেন,প্রতিনিধি দল দেখে গেছেন। মেশিনের ৩টা লাইনের মধ্যে একটি লাইনে সমস্যা আছে সেটা ঠিক করে যতদ্রুত সম্ভব সার্ভিসটি চালু করা হবে।ইতোমধ্যে আরো কিছু নতুন নতুন পরিক্ষা চালু হয়েছে। সিভিল সার্জন মো.আহম্মদ হোসেন মুঠোফোনে জানান,ঢাকা থেকে ইঞ্জিনিয়ার এসে দেখে গেছেন। একটু সমস্যা আছে সেটা সমাধান করতে হবে।আশা রাখি খুব তাড়াতাড়ি এক্স-রে সার্ভিস চালু হবে।

নিউজটি শেয়ার করুনঃ