৬ ডিসেম্বর বাউল কামাল পাশার ১২১তম জন্মবার্ষিকী


স্টাফ রিপোর্টার :
আজ ৬ ডিসেম্বর “দীন দুনিয়ার মালিক খোদা এত কষ্ঠ সয়না তোমার দিল্কি দয়া হয়না’ “চাইনা দুনিয়ার জমিদারী কঠিন বন্ধুরে”,“সাজিয়ে গুজিয়ে দে”,“কাঙ্কের কলসী জলে গিয়াছে ভাসি” ও ‘প্রেমের মরা জলে ডুবেনা’ সহ প্রায় ৬ হাজার গানের রচয়িতা গানের সম্রাট বাউল কামাল পাশার (কামাল উদ্দিন) ১২১ তম জন্মবার্ষিকী। ১৯০১ সালের এই দিনে তদানীন্তন সিলেট জেলার সুনামগঞ্জ মহকুমার দিরাই থানার ভাটিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহন করেন এই মরমী সাধক। মৃত্যুবরন করেন ১৯৮৫ সালের ৩রা মে। এ উপলক্ষ্যে আজ ৫ ডিসেম্বর সোমবার দিনভর সুনামগঞ্জ জেলা সহ ঢাকা-সিলেট ও দিরাই উপজেলার ভাটিপাড়া গ্রামে বাউল কামাল পাশা সংস্কৃতি সংসদের উদ্যোগে পৃথক পৃথক আলোচনা সভা ও কামালগীতি পরিবেশনের আয়োজন করা হয়েছে। কামাল পাশা সংস্কৃতি সংসদ সুনামগঞ্জ এর প্রতিষ্ঠাতা আহবায়ক সাংবাদিক বাউল আল-হেলাল বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। বাংলাদেশের মরমী সংস্কৃতির উজ্জল নক্ষত্র ও সুনামগঞ্জের পঞ্চরতœ বাউলের মধ্যমণি বাউল কামাল পাশা,শুধু গান রচনাই নয় ঐতিহাসিক নানকার আন্দোলন,৪৭ এর গণভোট আন্দোলন,৫২ এর ভাষা আন্দোলন, ৫৪‘র যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ৬৬ সালের ৬ দফা আন্দোলন,৬৯ এর গণ অভ্যুত্থান ও ৭০ এর নির্বাচন ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অবদান রাখেন। ৭০ এর পাকিস্তান জাতীয় ও প্রাদেশিক নির্বাচন উপলক্ষে হাওরাঞ্চলে গণ সংযোগে আগত আওয়ামীলীগ প্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সভামঞ্চে নৌকার পক্ষে গণসঙ্গীত পরিবেশন এবং ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে টেকেরঘাট ও সেলা সাবসেক্টরের বিভিন্ন মুক্তিফৌজ ক্যাম্পে পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে জীবনবাজী রেখে যুদ্ধ করার জন্য মুক্তিযুদ্ধাদের উৎসাহিত করে জাগরনী গান পরিবেশনের পাশাপাশি এই শিল্পী স্বাধীকার স্বাধীনতা ও স্বায়ত্বশাসনের পক্ষে নিরলস শ্রম সাধনা অব্যাহত রাখেন। বাউল কামাল পাশা সংস্কৃতি সংসদের সংগ্রহে এই প্রয়াত লোককবির প্রায় এক হাজারের বেশী গান রয়েছে। জানা যায়,২০২০ইং সালের ৭ অক্টোবর, ২০১৯ইং সনের ৩০ সেপ্টেম্বর ও ২০১৮ইং সনের ১০ অক্টোবর ৮ম থেকে ৬ষ্ট বারের মতো সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবরে সুনামগঞ্জের বর্তমান জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ বাউল কামাল পাশাকে মরণোত্তর একুশে পদক মনোনয়নের নিমিত্তে একাধারে ৩ বার প্রস্তাব প্রতিবেদন প্রেরণ করেছেন। এর আগে ২০১৭ইং সালের ২ অক্টোবর ৫ম বার, ২০১৪ইং সনের ১৯ নভেম্বর ৪র্থ বার সাবেক জেলা প্রশাসক শেখ রফিকুল ইসলাম এবং ২০১৩ইং সালের ১৮ নভেম্বর ৩য় বার,২০১২ইং সালের ৮ নভেম্বর ২য় বার ও ২০১১ইং সালের ২৩ নভেম্বর ১ম বার অনুরুপ প্রস্তাব প্রেরণ করেন সাবেক জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরী। জেলার ৩ জন জেলা প্রশাসক বিস্তারিত তথ্য উপাত্ত সহকারে বাউল কামাল পাশা (কামাল উদ্দিন) কে মরণোত্তর একুশে পদকে ভূষিত করার জন্য পর পর ৮বার প্রস্তাবনা প্রেরণ করলেও এখন পর্যন্ত এই শিল্পী মরণোত্তর স্বীকৃতি পাননি। চলমান মুজিববর্ষে,জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে সর্বপ্রথম গণসংগীত রচয়িতা বাউল কামাল পাশাকে স্বীকৃতি প্রদান করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি উদাত্ত আহবাণ জানিয়েছেন বাউল কামাল পাশা সংস্কৃতি সংসদ নামের সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা আহবায়ক সাংবাদিক বাউল আল-হেলাল। বিষয়টি নিয়ে সরকারের জনপ্রতিনিধি ও উর্ধতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি। এদিকে বাউল কামাল পাশার (কামাল উদ্দিন) ১২১ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে ৫ ডিসেম্বর সোমবার বিকেলে শিল্পকলা একাডেমীর উদ্যোগে এক আলোচনা সভা ও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে রচিত দেশাত্ববোধক গান নিয়ে বিশেষ সংগীতানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে বলে জানা গেছে। অনুষ্ঠানটি উপভোগ করার জন্য সকল সংস্কৃতিসেবীদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন জেলা শিল্পকলা একাডেমীর কালচারাল অফিসার আহমেদ মঞ্জুরুল হক চৌধুরী পাভেল।

নিউজটি শেয়ার করুনঃ