বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ত্রিমুখী ভোট যুদ্ধ, এগিয়ে রফিক 

নির্বাচিত হলে বিশ্বম্ভরপুর-কে একটি স্মার্ট উপজেলায় রূপান্তর করবো

~রফিকুল ইসলাম তালুকদার

স্টাফ রিপোর্টার:: ৬ষ্ট উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ২য় ধাপে সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলায় ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে আগামীকাল মঙ্গলবার (২১ মে)। সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভোট গ্রহন চলবে বিরতিহীন ভাবে। চেয়ারম্যান পদে মোট পাঁচজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তবে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন তিনজন প্রার্থী। এই তিন জন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীর মধ্যেই হবে ত্রিমুখী ভোটের লড়াই। তাদের মধ্যে একজন ভাগ্যবান হবেন আগামীর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান। মূল প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা হলেন- উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সহসম্পাদক ও ধনপুর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ রফিকুল ইসলাম তালুকদার (আনারস প্রতীক), উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ হারুনর রশীদ (হেলিকপ্টার) ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সম্পাদক দীলিপ কুমার বর্মন (ঘোড়া)। 

এদিকে ভোটের দিনকে সামনে রেখে ভোটারগন প্রার্থীদের জয়পরাজয়ের হিসেব যেমন করছেন, তেমনি যাকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করলে এলাকার সার্বিক উন্নয়ন হবে তাকেই ভোট দিয়ে বিজয়ী করবেন এমনটাই দাবি করছেন সচেতন ভোটারগন। এ উপজেলায় মোট ভোটার সংখ্যা ১ লক্ষ ২৪ হাজার ১২৭ জন। এরমধ্যে পুরুষ ৬২ হাজার ৯০৪ জন এবং নারী ৬১ হাজার ২২২ জন। হিজরা ভোটার রয়েছে ১ জন।

ভোটাররা বলছেন, প্রার্থীদের মধ্যে উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সহসম্পাদক ও ধনপুর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ রফিকুল ইসলাম তালুকদার (আনারস), উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ হারুনর রশীদ (হেলিকপ্টার) ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সম্পাদক দীলিপ কুমার বর্মন (ঘোড়া) এর মধ্যে ভোটের ত্রিমুখী লড়াই হবে। এদের মধ্যে কাউকে পাশ করতে হলে টেক্কা দিতে হবে আনারস প্রতীকের প্রার্থী রফিকুল ইসলামকে। 

এছাড়াও এই উপজেলায় রয়েছেন আরও দুই চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী। তারা হলেন, ফতেপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা যুবলীগের সদস্য রঞ্জিত চৌধুরী রাজন (দোয়াত-কলম), বিএনপি নেতা মোহন মিয়া বাচ্চু (মোটরসাইকেল) চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন। ৫জন প্রার্থীর মধ্যে তিনজন আওয়ামীলীগ নেতা ও দুইজন বিএনপি নেতা। তবে দলের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করায় সম্প্রতি উপজেলা বিএনপি সদস্য হারুনুর রশিদ দুলাল ও সাবেক বিএনপি নেতা মোহন মিয়া বাচ্চু কে বহিষ্কার করেছে দলটি। 

নির্বাচনকে সামনে রেখে কেন্দ্রীয় বিএনপির পক্ষ থেকে পরিষ্কার বলে দেওয়া হয়েছে, ভোটে যাওয়া যাবে না। ভোট বর্জনের আহ্বান জানিয়ে দলের কর্মসূচিও পালিত হয়েছে। ফলে কঠিন চাপের মুখে পড়েছেন উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ হারুনুর রশীদ (হেলিকপ্টার) এবং বিএনপি নেতা মোহন মিয়া বাচ্চু (মোটরসাইকেল)। অন্যদিকে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে হামলা ও গাড়ি ভাঙচুরের পাল্টাপাল্টি অভিযোগও পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় এক প্রার্থীর দুই সমর্থক আহতও হন। গত শুক্রবার (১০ মে) দুপুরে উপজেলার ফতেপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ। জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য রনজিত চৌধুরী ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক দিলীপ কুমার বর্মণের সমর্থকদের মধ্যে ওই ঘটনা ঘটে।

রনজিত চৌধুরী রাজন ও দিলীপ কুমার বর্মণের সমর্থকদের মধ্যে হামলা ও ভাংচুর এবং বিএনপি নেতা  হারুনুর রশীদ কে বহিষ্কার করায় কৌশলে উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সহসম্পাদক ও ধনপুর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ রফিকুল ইসলাম তালুকদার (আনারস) জনপ্রিয়তার পাশাপাশি বিশাল ভোটের ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছেন। তার পক্ষে কাজ করছে আওয়ামী লীগের সিংহভাগ একটি অংশ। যার কারণে বলা যায় বিজয়ের পথেই হাঁটছেন আনারস প্রতীকের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী রফিকুল ইসলাম তালুকদার। 

মাঠের ও এলাকা ভোটের হিসাবে রাজনৈতিক বিশ্লষকগন ও উপজেলার বয়োজ্যেষ্ঠগন জানিয়েছেন, পাঁচটি ইউনিয়নের মধ্যে সলুকাবাদ ইউনিয়নে মোহন মিয়া বাচ্চু, হারুনুর রশীদ ও রফিকুল ইসলাম তালুকদার ভালো প্রচারণা চালিয়েছেন। ভোটের মাঠে তারা ব্যপক সাড়া পেয়েছেন। তবে এই ইউনিয়নে সবশেষে ত্রিমুখী ভোট লড়াই হলেও বেশিরভাগ ভোট পাবেন মোহন মিয়া ও হারুন রশীদ। 

ধনপুর ইউনিয়নে একক প্রার্থী হিসেবে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান হেব্বিওয়েট প্রার্থী আনারস প্রতীকের  চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী রফিকুল ইসলাম বিপুল ভোটের ব্যবধানে এই ইউনিয়নে বিজয় চিনিয়ে নিয়ে আসবেন। তিনি ৫ম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও এই ইউনিয়নে বিশাল ভোট পেয়েছেন। সবশেষে তিনি অল্প ভোটের ব্যবধানে নির্বাচনে হেরেছিলেন। 

পলাশ ইউনিয়নে দিলীপ বর্মণ, হারুনুর রশীদ ও রফিকুল ইসলাম তালুকদারের কর্মী বেশি। সবাই কৌশলে ভোট সংগ্রহ করার লক্ষ্যে প্রতিনিয়ত কাজ করেছেন। সর্বশেষ পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে ত্রিমুখী ভোট যুদ্ধে। যার উদাহরণ মিলবে ২১ মে মঙ্গলবার বিকেলে।

ফতেপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান রঞ্জিত চৌধুরী রাজন ও দিলীপ বর্মণের মধ্যে ভোটের লড়াই হবে এই ইউনিয়নে। তবে কিছুসংখ্যক ভোট নিজের দখলে নিবেন রফিকুল ইসলাম। 

বাদাঘাট (দ:) ইউনিয়ন থেকে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী না হওয়ায় এই ইউনিয়নের সিংহভাগ ভোট পাবেন রফিকুল ইসলাম। গেল নির্বাচনেও তিনি বিশাল ভোট পেয়েছেন বাদাঘাট (দ:) ইউনিয়নে। এবারের প্রচার প্রচারণায় এই ইউপিতে তার ব্যপক সাড়া মিলেছে ভোটারদের কাছে।

বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার মুক্তিখলা গ্রামের বাসিন্দা আবদুল গণি বলেন, ‘শুধু দল না, আমরা প্রার্থীর দক্ষতা ও যোগ্যতা দেখেশুনে ভোট দেব। এবার ব্যক্তির যোগ্যতাই প্রাধান্য পাবে বেশি।’

জেলা যুবলীগের সদস্য বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার বাসিন্দা লুৎফুর রহমান নাঈম বলেন, দীর্ঘদিন যাবৎ রফিকুল ইসলাম আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত থাকায় সারা উপজেলায় তিনি ব্যপক ভাবে পরিচিত। পাশাপাশি তিনি ধনপুর ইউপি চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় নিরলস ভাবে যে সেবা দিয়েছেন তাতে উনার সুনাম আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। গত নির্বাচনে তিনি তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে অল্প ভোটে হেরেছেন তবে, এবারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে যেভাবে জনগণ সমর্থন দিয়েছেন তিনি বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হবেন বলে বিশ্বাস করি।  

শক্তিয়ারখলা গ্রামের বাসিন্দা মিজানুর রহমান বলেন, চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীদের মধ্যে এইবার বিশাল ভোটের ব্যবধানে রফিকুল ইসলাম পাশ করবেন। গতবছর তিনি অল্প ভোটের ব্যবধানে হেরেছেন, এবার আর এমন হবে না,বিশাল ভোটের ব্যবধানে তিনি পাশ করবেন। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পলাশ গ্রামের এক বাসিন্দা বলেন, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান থাকা অবস্থা হারুনুর রশিদের বিরুদ্ধে ২০১৮ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর এক নারীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছিলো, নির্বাচনকে সামনে রেখে তা এখন জোড়ালো ভাবে প্রচার করা হয়েছে। আর এতে তার প্রতি আস্থা হারিয়েছেন কর্মী সমর্থক সহ ভোটাররা৷ এই গুঞ্জনে তার ভোটের মাঠে ভাটা পড়েছে। 

দুর্গাপুর গ্রামের বাসিন্দা মোশাররফ হোসেন বলেন, নতুন ও তরুণ-যুবক ভোটাররা ঝুঁকছে আনারসের দিকে। তা ছাড়া তিনি গত নির্বাচনে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন, এবছর তার মাঠ গোছানো আছে ,সেদিক বিবেচনায় তিনিই বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। 

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ নেতা অনন্তপুরের (দাওয়া) বাসিন্দা আবুল হাসনাত বলেন, এবছর সাধারণ ভোটারা এমন একজনকে নির্বাচিত করবেন যিনি উপজেলার সার্বিক উন্নয়ন সহ কাঙ্খিত সকল সমস্যা সমাধান করার মনমানসিকতা রয়েছে। তবে সবদিক বিবেচনা করলে ধনপুর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম যোগ্য ব্যক্তি। আশা করছি তিনি বিজয়ী হবেন। 

চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী দিলীপ কুমার বর্মণ বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারে আছে। গত ১০ বছরে এলাকার উন্নয়ন হয়েছে। মানুষ উন্নয়নের স্বার্থেই তাঁকে ভোট দেবেন।

জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী ধনপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সহসম্পাদক চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী রফিকুল ইসলাম তালুকদার বলেন, দীর্ঘ একটা সময় ধরে জনগণের পাশে থেকে বিভিন্ন ভাবে তাদেরকে সেবা দিয়ে আসছি। তাদের বিপদে আপদে সবসময় ঝাপিয়ে পড়েছি, তারাও (জনগণ) আমাকে ভালোবাসা দিয়ে আগলে রেখেছেন। বিগত সময়ে আমি ধনপুর ইউপি চেয়ারম্যান হিসেবে বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছিলাম। পরবর্তীতে জনগণ আমাকে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার কথা বলায় আমি ৫ম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করি, কিন্তু বিজয়ী হতে না পারলেও অল্প ভোটে হেরেছি। 

তিনি আরো বলেন, আমার কর্মী সমর্থকরা হাল ছাড়েননি, ভোটাররা বরাবরই আমার ওপর আস্থা রেখেছেন। ভোটে আমার পৃথক কোনো কর্মী নেই। প্রত্যেক ভোটার আমার একেকজন কর্মী। প্রচার প্রচারণায় যেভাবে সাড়া পেয়েছি ইনশাআল্লাহ আগামীকাল মঙ্গলবার সর্বসাধারণের ভোটে আনারস প্রতীক বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হবে। 

বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বেনজির আহমেদ মানিক বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের নির্দেশে উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল সহ প্রতিটি ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ ভাবে আওয়ামী লীগের সাবেক সহসম্পাদক রফিকুল ইসলামের আনারস প্রতীকের পক্ষে কাজ করছেন। আনারস প্রতীকের প্রচার-প্রচারণায় ব্যপক জনসমাগম হয়েছে। সাধারণ জনগণ যেভাবে সাড়া দিয়েছে আমি বিশ্বাস করি আগামীকাল মঙ্গলবার তারা তাদের ভোটের মাধ্যমে রফিকুল ইসলামের বিজয় নিশ্চিত করবেন। 

নিউজটি শেয়ার করুনঃ