তাহিরপুরের টাঙ্গুয়ার হাওরে পর্যটকদের ভিড়

শওকত হাসান, তাহিরপুর:
ঈদে মিলাদুন্নবী ও সাপ্তাহিক ছুটি মিলে টানা তিন দিনের ছুটিতে তাহিরপুরের টাঙ্গুয়ার হাওর ও নিলাদ্রী লেকসহ বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে লাখো পর্যটকের ঢল নেমেছে। বৃহস্পপতিবার থেকে গত শনিবার পর্যন্ত টানা তিন দিন লাখো পর্যটকের পদভারে মুখর হয়েছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম টাঙ্গুয়ার হাওর, নিলাদ্রীর লেক, বারেকটিলা, যাদুকাটা নদী, লাকমা ছড়া, লালঘাট ছড়া, চাঁনপুর ঝরনা, দেশের সর্ববৃহৎ শিমুল বাগান। একইসঙ্গে এখানকার পাঁচ শতাধিক হাউসবোট সহ ছোট বড় সকল নৌকা বুকিং হয়ে আছে। পর্যটকবাহী নৌকা মালিকরা জানান, বৃহ¯পতিবার ঈদে মিলাদুন নবীর ছুটির সঙ্গে সাপ্তাহিক ছুটি মিলিয়ে টানা তিন দিন সরকারি ছুটি থাকায় গত বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই পর্যটকরা হাওরমূখি হয়েছে। গত বৃহস্পপতিবার ও শুক্রবার সকালে তাহিরপুর উপজেলা সদর বাজারের নৌকা ঘাটে দেখা গেছে হাজারো পর্যটকের ভিড়। কেউ আগে থেকে বুকিং করা নৌকায় উঠছেন আবার কেউ নৌকায় খাওয়া দাওয়া করার জন্য বাজারে কিনা-কাটা করছেন। দুপুরের দিকে টাক্সগুয়ার হাওর ওয়াচ টাওয়ার এলাকায় শত শত নৌকা থেকে পর্যটকরা টাঙ্গুয়ার হাওরে নেমে গোসল করছে কেউ আবার টাঙ্গুয়ার ভিতরে থাকা হাতে চালিত ছোট নৌকা দিয়ে হাওরের সারি সারি হিজল-করছ গাছের ভিতর দিয়ে ঘুরতে দেখা গেছে। বিকালে ট্যাকেরঘাট নিলাদ্রীর পাড়ে দলে দলে ঘুরে বেড়াচ্ছেন দর্শনার্থীরা। এযেন অপরূপ সুন্দর্যের লীলাভ‚মি। যে যার মত করে আনন্দে মেতেছেন পর্যটকরা। ঢাকা থেকে সপরিবারে ভ্রমণে আসেন মনির আহম্মদ। কেমন কাটছে হাওর ভ্রমণ প্রতিক্রিয়ায় জানালেন, এক কথায় অসাধারণ! জলের রঙ কখনো আকাশের মতো নীল, কখনো আয়নার মতো স্বচ্ছ টলটল, এমন মুগ্ধ রঙে রাঙা পানিতে টইটুম্বর টাক্সগুয়ার হাওর। যে হাওরের দূরে মেঘালয় রাজ্যের পাহাড়ের ঝরনা থেকে নেমে আসা স্বচ্ছ পানি। পাশের মেঘালয়ের পাহাড়কে মনে হয় হাওরের সীমানা প্রাচীর। আমাদের চেয়ে সন্তানরা মজা করছে বেশি। সিলেট বিয়ানীবাজার থেকে আসা পর্যটক দ¤পতি খোরশেদ আলম ও সানজিদা বেগম। জানান, খোরশেদ আলম বিয়ের আগেও আমার আসা হয়েছে। তবে, এবার অনেক পরিবর্তন লক্ষ্য করছি। আগের চেয়ে অনেক পর্যটক ভেড়েছে। তবে এতো সম্ভাবনাময় একটি পর্যটন ¯পটে টুরিস্ট পুলিশ নেই, আসলেই অবাক লাগে। এখানে টুরিস্ট পুলিশের একটি ইউনিট থাকলে আরোও ভালো হতো। তবে সব মিলে খুবই ভালো সময় কাটছে। এই বিশাল হাওর দেখলে কার না ভালো লাগবে। এই রুদ্রের মাঝেও এতগুলো মানুষ হাওরে স্মান করছেন, এই দৃশ্য দেখেই বোঝা যায় টাক্সগুয়ার হাওর মানুষের কাছে কতটা প্রিয়। এভাবেই প্রতিক্রিয়া জানালেন, মোহনগঞ্জ থেকে আসা পর্যটক লাভনী খানম। ঢাকা থেকে আসা আতিকুর রহমান বলেন, এখানকার মতো এক সাথে এতো পর্যটনস্পট আর কোথাও নেই। টাক্সগুয়ার হাওরের সুন্দর্য উপভোগ করার পরপরেই মেঘালয় পাহাড়, বেশ কয়েকটি ছড়া, ঝরনা, রূপের নদী যাদুকাটা, বারেকটিলা ও শিমুল বাগান সব মিলিয়ে সুন্দর্যের লীলা খেলা এখানে। টাক্সগুয়ার হাওর নৌ পর্যটন সমিতির সভাপতি শাহিনুর তালুকদার জানান, বন্ধের দিনে স্থানীয় ও আশপাশ এলাকা থেকে প্রায় পাঁচ শতাধিক নৌকা আসে এখানে। টানা বেশি দিন ছুটি থাকলে আগে থেকেই সব নৌকা বুকিং হয়ে যায়। পর্যটকদের সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি আমরা। তিনি আরও বলেন, প্রতিবছর দুই ঈদ, দুর্গাপুজা ও ইংরেজি নববর্ষে তাহিরপুরে সর্বোচ্চ পর্যটকের ঢল নামে। এসময় একদিনেই হাওরে লক্ষাধিক পর্যটক সমাগম ঘটে বলে জানান পর্যটন ব্যবসায়ীরা। তাহিরপুর থানা অফিসার ইনচার্জ শেখ মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন জানান, ঈদে মিলাদুন্নবীর ছুটিতে ভ্রমণ পিপাসু লাখো পর্যটক এখন তাহিরপুরে অবস্থান করছেন। আর তাদের নিরাপদ ভ্রমণ নিশ্চিত করতে পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে। সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখেই পুলিশ সদস্যরা পর্যটনস্পর্ট গুলোতে টহল জোরদার করা হয়েছে। তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) আসাদুজ্জামান রনি বলেন, ছুটি পেলেই দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ টাক্সগুয়ার হাওরে ভ্রমণে আসেন। এবারও লাখো পর্যটকের সমাগম হয়েছে এখানে। আমরা পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। কোনো পর্যটক যেন হয়রানির শিকার না হয় সেজন্য উপজেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে একাধিক ভ্রাম্যমাণ আদালত হয়ে থাকে।

নিউজটি শেয়ার করুনঃ