স্টাফ রিপোর্টার::
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নীতিমালা অনুযায়ী সীমান্ত হাট পরিচালনার কথা থাকলেও সুনামগঞ্জের বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের ডলুরা বর্ডার হাটে নিয়মনীতির তোয়াক্কা করছেন না সংশ্লিষ্টরা। হাট নীতিমালা অনুযায়ী- সীমান্তের ৫ কিলোমিটারের মধ্যে উৎপাদিত কৃষি পণ্য ও হাল্কা শিল্পপণ্য খুচরা মূল্যে বিক্রি করার কথা থাকলেও এই হাটে আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের বহুজাতিক কো¤পানির পণ্য পাইকারি মূল্যে বিক্রি হচ্ছে দেদারসে। হাটের নির্দিষ্ট সময়ের পরও সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে এসব পণ্য গেইট পাস হয়ে পাচার হচ্ছে জেলাসহ সিলেট ও ঢাকায়। অভিযোগ রয়েছে- নিয়ম না মেনে ডলুরা বর্ডার হার্ট পরিচালনা হচ্ছে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের মনোনীত দালাল ও সংশ্লিষ্টরা। প্রতি সপ্তাহে বর্ডার হার্টে হচ্ছে মোটা অংকের অবৈধ টাকার লেনদেন। একটা অংশ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ পেয়ে থাকেন বলে অভিযোগ রয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বর্ডার হাটের অবৈধ লেনদেনের নেপথ্যে রয়েছেন সারফিন নামের এক স্থানীয় ব্যাক্তি। তিনি ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করে থাকেন। স্থানীয় বিজিবি, কাস্টমস ও হাট ব্যবস্থাপনা কমিটির নাকের ডকায় এমনটি ঘটতে থাকলেও অদৃশ্য কারণে কোনো পদক্ষেপ নেন না অসাধু কর্মকর্তারা। জানা গেছে- সীমান্ত হাট নীতিমালা অনুযায়ী স্থানীয় পর্যায়ে উৎপাদিত ফলমূল, শাকসবজি, মসলা, বনজ স¤পদ, প্রসাধনসামগ্রি ও গৃহস্থালির পণ্যসহ ইত্যাদি পণ্য খুচরা মূল্যে বেচাকেনা হবে। কিন্তু ডলুরা বর্ডার হাটে মঙ্গলবার সরেজমেনি গিয়ে দেখা যায়, হাটে হরলিক্স জাতীয় পণ্য তৈল, কসমেটিকস, বিদেশি ক্রিম, শ্যা¤পু, জুতা, শাড়ি, বিস্কুট, জিরা,চকলেটসহ আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড ও বহুজাতিক কো¤পানির পণ্য বিক্রি হচ্ছে অবাধে। বর্ডার হাট ঘুরে দেখা যায়, এখানে নির্দিষ্ট ২৫টি জায়গা থাকলেও হাটে ভিট ছাড়াও প্রায় অর্ধশত বাঙালি খুচরা দোকান বসানো হয় উৎকোচ নিয়ে। সীমান্তের ৫ কিলোমিটারের ভেতরে নির্দিষ্ট ক্রেতা কার্ড থাকলেও হাটের ফটকে মনোনীত দালালকে টাকা দিয়ে হাটে প্রবেশ করছেন অন্য এলাকার মানুষ। হাটে বাঙালি ভেন্ডারের দোকানে খুচর বিক্রি হয়ে থাকলেও ভারতীয় প্রায় ভেন্ডারদের দোকানে পাইকারি বিক্রি হচ্ছে। একজন ক্রেতা ২০০ ডলার (১৬ হাজার) টাকার পণ্য ক্রয় করার বাধ্যবাধকতা থাকলেও এমন নিয়ম মানা হচ্ছে না। হাট চলাকালীন কিছু ব্যবসায়ী ভারতীয় দোকানিদের কাছ থেকে লাখ টাকার বেশি পণ্য ক্রয় করে গোদামজাত করে রাখেন। হাটের সময় শেষ হলেই অবৈধ এসব পণ্য টমটম বা টেলাগাড়ি করে ফটক পার করে বাংলাদেশে নিয়ে আসেন ব্যবসায়িরা। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, এসব পণ্য গেইট পাস করতে হলে বস্তা প্রতি ৫০০-১০০০ গুণতে হয় ব্যবসায়ীদের। আর এই টাকা আদায় করেন সারফিন নামের ওই লোক। হাট থেকে পাওয়া এ অবৈধ টাকার ভাগ সারফিনের মাধ্যমে পেয়ে যান প্রভাবশালী মহল। তাই কাস্টমস ও বিজিবির সামনে এসব পণ্য হাট থেকে বের হয়ে আসলেও কোনো ধরণের বাঁধার মুখে পড়তে হয় না তাদের। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী বলেন, হাটে বাংলাদেশের ভিট ২৫টি। হাটে চিপস, মোটরসহ কিছু পণ্য নিয়ে যাই। তবে হাটে ভারতীয়রা তেমন আসে না,তাই বেচাবিক্রিও ভালো হয় না। ভারতীয় ভেন্ডাররা পাইকারি মূল্যে কসমেটিকস, চকলেট বিস্কুটসহ বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করে থাকেন। শহর থেকে অনেক ব্যবসায়ী আসেন এবং তারা এই পণ্য পাইকারি কিনে গেইট পাস করে নিয়ে যায়। পণ্য বের হওয়ার সময় এক টমটমচালকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, এসব আনোয়ার ভাইয়ের মাল। ব্যবসায়ী আনোয়ার স¤পর্কে জানতে চাইলে তিনি আর মুখ খুলেননি। হাটের টাকা উত্তোলনের বিষয়ে মুঠোফোনে সারফিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি এসবের সাথে জড়িত নই। আমার বিরুদ্ধে আনা কথাগুলো সত্য নয়।