ছাতকে অধ্যক্ষসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীর মামলা

ছাতক প্রতিনিধি::
ছাতক উপজেলার গোবিন্দগঞ্জ আব্দুল হক স্মৃতি কলেজের অধ্যক্ষ সুজাত আলী রফিক সহ ৬জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করার ঘটনায় জেলা জুড়েই ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনার ঝড় বইছে।গত মঙ্গলবার সুনামগঞ্জের সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে অনিয়ম দুনীতির একটি মামলা হয়। কলেজ ফান্ডের কোটি টাকা লুটপাট, অনিয়ম,দুর্নীতির অভিযোগের ঘটনায় সুজাত আলী রফিক সহ ৬জনের বিরুদ্ধে বাদী হয়ে আদালতে মামলা করেছেন কলেজের বিএসএস (সম্মান) কোর্সের শিক্ষার্থী ও স্থানীয় সুহিতপুর গ্রামের বাসিন্দা ইমদাদুল হক ইমন। আদালতের বিচারক তার মামলাটি আমলে নিয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) নির্দেশ প্রদান করেন।এ মামলার আসামিরা হচ্ছেন, কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) অনিল কুমার মল্লিক, কলেজের সহকারী অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, কলেজ পরিচালনা কমিটির সদস্য উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান, কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি, কলেজ পরিচালনা কমিটির সদস্য তৈয়ব আলী। আলমামলার আরজিতে বাদী উল্লেখ করেন, সুনামগঞ্জে মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ছিলেন আব্দুল হক। তিনি জাতীয় পরিষদ সদস্য ও যুদ্ধ চলাকালীন ৫ নম্বর সেক্টরের বেসামরিক উপদেষ্টা ছিলেন। স্বাধীনতার ঊষালগ্নে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। তাঁর স্মৃতি রক্ষার্থে এলাকাবাসী ‘গোবিন্দগঞ্জ আব্দল হক স্মৃতি কলেজ’ প্রতিষ্ঠা করেন। এ কলেজে ১৯৯৬ সালের ২৯ ফেরুয়ারি রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ের প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন সুজাত আলী রফিক। চাকরিরত অবস্থায় ২০০৬ সালের ২৩ জুন তিনি যুক্তরাজ্যে যাওয়ার জন্য কলেজ পরিচালনা কমিটির কাছে ছুটির আবেদন করলে পরদিন কমিটি তা মঞ্জুর করে। একই বছরের ২৩ আগস্ট তিনি আবার ছুটি বর্ধিত করার আবেদন করলে সেটিও মঞ্জুর করা হয়। কিন্তু তিনি নির্ধারিত সময়ে কলেজে যোগদান না করায় পরিচালনা কমিটি ২০০৭ সালের ৪ এপ্রিল ১৫দিনের মধ্যে তাঁকে যোগদানের জন্য চিঠি দেয়। কিন্তু তা না করে ১৭ এপ্রিল ছুটি বর্ধিত করার আরেকটি আবেদন দেন তিনি। কমিটি এই আবেদন গ্রহণ না করে পরবর্তীতে একই বছরের ২ ডিসেম্বর কেন তাঁকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হবে না জানতে চেয়ে এই মর্মে নোটিশ দেয়। কিন্তু সুজাত আলী নোটিশের জবাব না দিয়ে ১৬ ডিসেম্বর চাকরি থেকে অব্যাহতির আবেদন দেন কমিটির কাছে। কমিটি পরে ২০০৮ সালের ১০ জানুয়ারি সেটি গ্রহণ করে।মামলার আরজিতে বাদী আরও উল্লেখ করেন, সুজাত আলী চাকরি থেকে অব্যাহতি নেওয়ার প্রায় দুই বছর পর ২০১০ সালের ২০ মার্চ একটি সভা করে অন্য আসামিরা ২০০৭ সালের ১৬ ফেরুয়ারি থেকে ২০১০ সালের ২৩ মার্চ পর্যন্ত সুজাত আলীর অনুপস্থিতিকে অসাধারণ ছুটি দেখিয়ে বেআইনিভাবে তাকে পুনরায় চাকরিতে স্বপদে বহাল করেন। কমিটির এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে স্থানীয় বাসিন্দা এই মামলার ১৮ নম্বর স্বাক্ষী আশিকুর রহমান হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন (৪৭৩৩/২০১০) দায়ের করেন। আদালত ২০১০ সালে ৬ ডিসেম্বর পরিচালনা কমিটির এই সিদ্ধান্তকে অবৈধ ঘোষণা করেন। সুজাত আলী পরে হাইকোর্টের এই আদেশের বিরুদ্ধে আপীল করলে ২০১৬ সালের ৩১ জানুয়ারি সেটি খারিজ হয়ে যায়। পরবর্তীতে মাধ্যক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর আদালতের এই আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে সুজাত আলীর বেতন-ভাতা স্থগিতের জন্য কলেজ পরিচালনা কমিটিকে চিঠি দেয়। কিন্তু কমিটি সেটি করেনি। মামলায় বাদী জানান, আসামিরা মিলে দুর্নীতির মাধ্যমে বেআইনিভাবে সরকারের বিপুল পরিমান টাকা আত্মসাত লুটপাট করেছেন। এব্যাপারে আইনজীবী প্রদীপ কুমার নাগ আদালতের মামলা দায়ের ও আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এব্যাপারে গোবিন্দগঞ্জ আব্দুল হক স্মৃতি কলেজের অধ্যক্ষ সুজাত আলীর সঙ্গে যোগাযাগ করা হলে তিনি আদালতে মামলা হওয়ার বিষয়টি শুনেছেন বলে জানান। তবে কাগজপত্র না দেখে কোনো মন্তব্য করতে নারাজ তিনি।

নিউজটি শেয়ার করুনঃ