শওকত হাসান, তাহিরপুর –
তাহিরপুরে জমে উঠেছে বোর ধান কাটা। এবছর বোর ধান চাষাবাদে ফলন ভালো হওয়ার কৃষকের মূখে ফুটে উঠেছে হাসির ঝিলিক। তাছাড়া বৈশাখের শুরু থেকে আবহাওয়া ভালো থাকায় উপজেলার বিভিন্ন হাওরে দ্রুত ধান কাটা এগিয়ে যাচ্ছে। জানাগেছে, উপজেলার মাটিয়ান ও বর্ধিত গুরমা হাওরে ৭৫শতাংশ, মহালিয়া ও শনিতে ৩০শতাংশ ধান কাটা হয়েছে। এছাড়া এ বছর প্রতি কেয়ারে (৩০ শতকে ১কেয়ার) জমিতে ১৪থেকে১৫ মণ ধান উৎপাদন হয়েছে। যেখনে অন্যান্য বছর এর পরিমান অনেক কম ছিলো। তবে টানা ১০ দিন ভারী বৃষ্টিপাত ও কালবৈশাখী ঝড় হবে আবহাওয়া অধিদপ্তরের এমন বার্তায় হাওরের কৃষকদের দ্রুত ধান কাটার তাগিদ দিয়েছে তাহিরপুর উপজেলা প্রশাসন। তাহিরপুর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানায়, উপজেলার বৃহৎ বোর ফসলের হাওরগুলো হলো- শনি, মাটিয়ান, মহালিয়া, সমসা ও বর্ধিত গুরমা হাওর। একজন কৃষক সে তার জমি থেকে ধান কর্তন করবে সেটা নির্ভর করে তার ইচ্ছা ও মর্জির উপর। তারপরও আমাদের দায় থেকে হাওরপারের কৃষকদের জোর তাগিদ দেয়া হচ্ছে যেন তাদের জমিতে শতকরা ৮০ ভাগ ধান পাকা হলেই যেন দ্রুত ধান কেটে নেন। এছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিদের তাগিদ দেয়া হয়েছে তারা যেন দ্রুত ধান কাটার জন্য এলাকার কৃষকদের তাগিদ দেন। তাহিরপুর উপজেলা কৃষি অফিসের উপ সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান বলেন, এ বছর হাওরে পর্যাপ্ত পরিমান কম্বাইন্ড হারভেস্টার থাকার কারণে কৃষকদের ধান কাটা নিয়ে কোন দুর্ভোগ নেই। উপজেলার শনির হাওর পাড়ের কৃষক ভাটি তাহিরপুর গ্রামের কামরুল ইসলাম বলেন, আমি শনির হাওরে ৫কেয়ার জমি চাষ করেছি। আবহাওয়া ভালো হওয়ায় ও ধান কাটার মেশিন কম্বাইন্ড হারভেস্টার থাকায় সহজেই তিন কেয়ার কেটে গোলায় তুলছি। এবার ফলনও ভালো হয়েছে প্রতি কেয়ারে ১৪ থেকে ১৫ মণ ধান উৎপাদন হয়েছে। তিনি আরো জানান, শনির হাওরে এ পর্যন্ত ২৫ শতাংশ ধান কাটা হয়েছে। চলমান আবহাওয়ার মতো টানা ১০/১২ দিন আবহাওয়া এভাবে থাকলে হাওরের সমুদয় ধান কৃষকের গোলায় উঠে যাবে। মাটিয়ান হাওরপাড়ের বড়দল গ্রামের কৃষক মাহদী হাসান বলেন, আমি মাটিয়ান হাওরে ১২ কেয়ার জমিতে বোর ধান চাষ করেছি। কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিনে সব ধান কেটেছি। এখন শুকিয়ে গোলায় তুলছি। আমি ১২ কেয়ার জমি থেকে দেড়শ মণ ধান পেয়েছি। মাটিয়ান হাওরে ৭৫ শতাংশ ধান কাটা হয়ে গেছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে হাওরের সকল ধান কাটা হয়ে যাবে। মহালিয়া হাওরের সুলেমানপুর গ্রামের কৃষক হাবুল মিয়া বলেন, মহালিয়া হাওরে ২৫ ভাগ ধান কাটা হয়েছে। এ হাওরে ফলনও অন্যান্য বছরের তুলনায় ভালো হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আগামী ১০/১২ দিনের মধ্যেই ধান কাটা শেষ হয়ে যাবে। তবে ২৩ এপ্রিল থেকে ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ার কথা শুনে আমাদের চিন্তা হচ্ছে। উপজেলার বর্ধিত গুরমা হাওরে সবচেয়ে বেশী ধান কাটা হয়েছে। এ হাওরের হুকুমপুর গ্রামের কৃষক আবুল কালাম জানান, তাদের হাওরে ৮০ শতাংশ ধান কাটা হয়ে গেছে। আগামী ৪/৫ দিনের মধ্যে বর্ধিত গুরমা হাওরের সকল ধান কাটা শেষ হয়ে যাবে বলে তিনি জানিয়েছেন। মাটিয়ান হাওরপাড়ের বড়দল গ্রামের কৃষক কম্বাইন্ড হারভেস্টারের মালিক মিলন মিয়া বলেন, হাওরে কম্বাইন্ড হারভেস্টার থাকার কারণে কৃষকরা জমির পাকা ধান নিয়ে শ্রমিক সংকটে বসে থাকতে হচ্ছে না। তাদের চাহিবা মাত্রই কম্বাইন্ড হারভেস্টার দিয়ে ধান কর্তন করা হচ্ছে। তাহিরপুর উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো. হাসান-উদ-দৌলা বলেন, উপজেলার সবগুলো হাওরেই এবার ফসল ভালো হয়েছে। মাটিয়ান ও বর্ধিত গুরমা হাওরে ধানকাটা প্রায় শেষের পথে। শনি ও মহালিয়া হাওরের প্রায় ২৫/৩০ ভাগ ধান কাটা হয়েছে। দ্রুত ধান কাটার জন্য হাওরে গিয়ে উপ-সককারী কৃষি কর্মকর্তাগণ কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছে। তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুপ্রভাত চাকমা বলেন, উপজেলার জনপ্রতিনিধি ও কৃষকদের আগাম আবহাওয়া বার্তা দিয়ে দ্রুত ধান কাটার জন্য তাগিদ দেয়া হয়েছে।