তাহিরপুরে কৃষকদের স্বেচ্ছাশ্রমে জমির ধান রক্ষায় বাঁধ নির্মাণ

তাহিরপুর প্রতিনিধিঃ-
তাহিরপুর ও মধ্যনগর উপজেলার ৮২ গ্রামের কৃষকদের স্বেচ্ছাশ্রমে অবশেষে নির্মাণ করা হয়েছে টাঙ্গুয়ার হাওরের নজরখালি ফসলরক্ষা বাঁধ। এ বছর টাঙ্গুয়ার হাওরের নজরখালি ফসল রক্ষাবাঁধটি পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক নির্মাণের জন্য টাঙ্গুয়ার হাওরপাড়ের ৮২ গ্রামের কৃষকরা সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে দাবী জানিয়ে আসছিল। তাতে সরকারের কোন দপ্তরই বাঁধটি নির্মাণের কোন উদ্যোগ নেয়নি। এতে পানিতে তলীয়ের যাওয়া আশঙ্কায় ছিলো টাঙ্গুয়ার হাওরপাড়ের প্রায় ৯ হাজার হেক্টর জমির ধান। সম্প্রতি পাহাড়ি ঢলে নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নজরখালি বাঁধটি খোলা থাকায় পাটলাই নদীর পানি সরাসরি টাঙ্গুয়ার হাওরে প্রবেশ করায় মধ্যনগর ও তাহিরপুর উপজেলার টাঙ্গুয়াপাড়ের ৮২ গ্রামের কৃষকরা তাদের জমির ধান পানির নীচে তলিয়ে যাবে। এমন আশঙ্কায় তারা দিনরাত চারদিন বাঁধে কাজ করে অবশেষে নজরখালি বাঁধটি নির্মাণ কাজ শেষ করে। চলতি অর্থ বছর তাহিরপুর উপজেলায় হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণে ১১২টি প্রকল্পে ২০ কোটি টাকা বরাদ্ধ দেয় বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড। পানি উন্নয়ন বোর্ডের অনুমোদিত প্রকল্পের মধ্যে টাঙ্গুয়ার হাওরের নজরখালি বাঁধ তালিকায় না থাকায় টাঙ্গুয়ার হাওর পাড়ের তাহিরপুর ও মধ্যনগর উপজেলার ৪টি ইউনিয়নের ৮২ গ্রামের কৃষকদের মাঝে হাতাশা দেখা দিয়েছে। বিগত ১৫ ফেব্রুয়ারী পানিসম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম টাঙ্গুয়ার হাওরের নজরখালি বাঁধটি পরিদর্শনে এলে হাজারো কৃষকের বিক্ষোভ ও দাবীর মূখে তিনি কৃষকদের আশ্বাস প্রদান করেছিলেন। সেদিন তিনি সমবেত কৃষকদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, ‘হাওরের কৃষকদের ফসল রক্ষার স্বার্থে সরকার সবকিছুই করবে। সরকার কৃষকদের মূখে হাসি দেখতে চায়। কৃষকরা যাতে শতভাগ ফসল ঘরে তুলতে পারে সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবে সরকার। কৃষকের শতভাগ ফসল রক্ষার বিষয়টি মাথায় রেখে আমরা কাজ করবো। তিনি আরও বলেন, আমাদের পরিকল্পনার কারণে কৃষকদের যাতে ক্ষতি না হয় সে দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। নতুন করে টাঙ্গুয়ার হাওরপাড়ে ৩ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ করতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নিয়ে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। আমরা এমন সিদ্ধান্ত নিবো যাতে করে আপনারা এ হাওরের শতভাগ ফসল ঘরে তুলতে পারেন। উপমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের পরেও নজরখালি বাঁধের নির্মাণ কাজ না হওয়াতে হাওরের কৃষকদের মধ্যে রয়েছে ক্ষোভ ও হতাশা। মধ্যনগর উপজেলার দক্ষিণ বংশীকুন্ডা ইউনিয়নের রংচি গ্রামের কৃষক আব্দুল হাই বলেন, নজরখালি বাঁধটি আমরা সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতন এর সহযোগীতায় রংচি গ্রামের প্রায় তিনশত জন কৃষক দিনরাত কাজ করে বাঁধটি নির্মাণ করেছি। তিনি আরো বলেন, বাঁধটি নির্মাণ করা না হলে আমাদের বংশীকুন্ডা উত্তর দক্ষিণ এ দুটি ইউনিয়নের সমুদয় বোর ধান আগাম বন্যার পানিতে তলিয়ে যেতো। অথচ অনেক বছর ধরে এ বাঁধটি পানি উন্নয়ন বোর্ড নির্মাণ করে আসছে। উত্তর বংশীকুন্ডা ইউনিয়নের আলী উছমান বাদল বলেন, টাঙ্গুয়ার হাওরের নজরখালি বাঁধটি বর্তমানে যে অবস্থায় আছে এ অবস্থায় যদি আরো ১৫/২০ দিন থাকে তাহলে আমরা সোনার ফসল ঘরে তুলতে পারবো। টাঙ্গুয়ার হাওর কেন্দ্রীয় গ্রাম উন্নয়ন সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক আহমেদ কবির বলেন, পরিবেশ রক্ষার কথা বলে পানি উন্নয়ন বোর্ড এ বছর নজরখালী বাঁধটিতে কাজ করেনি। তাই আমাদের চেষ্টায় বাঁধটি সংস্কার করতে হয়েছে। দক্ষিণ বংশীকুন্ডা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান বলেন, প্রশাসনের লোকজন আমাদের পাশে না থাকলেও স্থানীয় সংসদ সদস্য আমাদের যে অনুপ্রেরনা যুগিয়েছেন তাতে তিনি এলাকাতে স্মরনীয় হয়ে থাকবেন। তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুপ্রভাত চাকমা টাঙ্গুয়ার হাওরের নজরখালি বাঁধটি স্বেচ্ছাশ্রমে কৃষকদের নির্মাণ কাজ দেখে তিনি বলেন, সরকারের সিদ্ধান্তের মধ্যে থেকেই তাদের সবকিছু করতে হয়। সুনামগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতন বলেন, টাঙ্গুয়ার হাওরপাড়ের কৃষকদের ফসল রক্ষায় তিনি সবসময়ই কথা বলে যাবেন। কৃষকদের জন্য সরকারীভাবে কিছু করতে না পারলেও তিনি কৃষকদের ফসল রক্ষার জন্য ব্যক্তিগতভাবে হলেও সবসময়ই কাজ করে যাবেন।

নিউজটি শেয়ার করুনঃ