স্টাফ রিপোর্টার::
কোন সূরে যাও বাশঁরী বাজাইয়ারে ভাটিয়াল নাইয়া,ও আমার মনপ্রাণ কারিয়া নিলায় বাঁশির গান শুনাইয়ারে” এই ধামালী গানের রচয়িতা মরমী সাধক লোক কবি প্রতাপ রঞ্জন তালুকদারের ৭৮তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে। গত শনিবার সকালে শান্তিগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম বীরগাঁও ইউনিয়নের সুরমা নদী ঘেষা টাইলা গ্রামে প্রয়াত কবি প্রতাপ রঞ্জন তালুকদারের বাড়ির পাশের মাঠে দু’দিনব্যাপী এ উৎসব শুরু হয়েছে। প্রতাপ রঞ্জন ধামাইল উৎসব উদযাপন কমিটি ও শান্তিগঞ্জ উপজেলা প্রতাপ রঞ্জন স্মৃতি পরিষদের যৌথ উদ্যোগে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে। শান্তিগঞ্জ উপজেলা প্রতাপ রঞ্জন স্মৃতি পরিষদের সভাপতি জয়ন্ত তালুকদার পুল্টনের সভাপতিত্বে ও সাধারন সম্পাদক শ্যামল দে’র সঞ্চালনায় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন,সদর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও শান্তিগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান হাজী আবুল কালাম। সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন প্রবীন আওয়ামীলীগ নেতা হাজী তহুর আলী,শান্তিগঞ্জ উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান দোলন রানী তালুকদার,পশ্চিম বীরগাঁও ইউপি চেয়ারম্যান মো. লুৎফুর রহমান জায়গীরদার খোকন,জেলা সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি ও মোহনা টেলিভিশনের প্রতিনিধি কুলেন্দু শেখর দাস,শান্তিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি সিতাংশু শেখর ধর,যুগ্ম সাধারন সম্পাদক মো. মাসুক মিয়া,ঢাকা সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবি মোস্তাক বাহার, শিক্ষক প্রণব দাস মিঠু,শিক্ষক নীলকণ্ঠ দাস,অসিত কুমার দাস,প্রতাপ রঞ্জন ধামাইল উৎসব উদযাপন কমিটির সভাপতি ও ইউপি সদস্য মো. মছরু মিয়া,সাধারন সম্পাদক রাসেল আহমদ,শুভেন্দু শেখর দাস,কবির ছেলে প্রসেজিৎ তালুকদার ও পিন্টু তালুকদার,সুধারঞ্জন দাস প্রমুখ। কবি প্রতাপ রঞ্জন তার জীবদ্দশায় ৮ শতাধিক ধামালী গানের রচয়িতা প্রয়াত মরমী সাধক লোক কবি প্রতাপ রঞ্জন তালুকদার। হাওরপাড়ের জেলা সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম বীরগাঁও ইউনিয়নের সুরমা নদী ঘেষা এক অজপাড়া টাইলা গ্রামে প্রমোদ রঞ্জন তালুকদার ও মাতা অমূল্য বালা তালুকদারের গর্ভে ১৩৫২ বাংলায় জন্মগ্রহণ করেন এই মরমী কবি। তিন বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার বড়। অভাব অনটন আর টানাপোড়নের সংসারে কবি অন্যর জমিতে দিনমুজুরের কাজ করে ৫ম শ্রেনী পর্যন্ত লেখাপড়া করলেও আর্থিক অসংগতির কারণে প্রাইমারী স্কুলের গন্ডি পেরিয়ে হাইস্কুলে যাওয়া সম্ভব হয়ে উঠেনি তার। তিনি তার মেধা.প্রজ্ঞা,মনন আর অনুভূতি দিয়ে দিনমুজুরের কাজের ফাকেঁ ফাকে রাতে হ্যারিকেন জ্বালিয়ে নিজের ভাঙ্গা কুঠিরে রাতে গান রচনা করতেন। গানগলো আসর বন্দনা,বাংলা ভাষার ধামালী,দেশাত্মবোধক ধামালী,স্বাধীনতা ধামালী,দেশ প্রেমিকের ধামালী,শিক্ষামূলক ধামালী,যৌতুক নিষেধ ধামালী,ইন্দিরা পতন ও জামাই ¯œানসহ মরমী সাধক প্রতাপ রঞ্জন তালুকদার তার জীবদ্দশায় প্রায় ৮ শ উপরে গান রচনা করে গেছেন। এছাড়া দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে হিন্দু সম্প্রদায়ের বিয়ের অনুষ্ঠানে এই মরমী কবির বান্দা ধামাইল গানের প্রচলন এখনো বিদ্যমান আছে। তিনি সংগীত বইসহ অসংখ্য বই রচনাও করে সিলেট বিভাগ থেকে শুরু করে চট্রগ্রাম,বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কবি নিজে তার লিখা বই বিক্রি করে জীবন জীবিকা চালাতেন। তিনি বাউল স¤্রাট শাহ আব্দুল করিম ও রাধারমণ দত্তের মতো গান রচনা ও গবেষনায় কোনদিন পিছিয়ে ছিলেন না। কিন্ত এই কবির মিডিয়াতে প্রচার ও প্রসার না থাকায় তিনি আজীবন রয়ে গেছেন অজপাড়া গায়ের ভাঙ্গা এক কুঠিরে। তিনি সংসার জীবনে ন্ত্রী দুই ছেলে দুই মেয়েসহ অনেক আত্মীয় স্বজনসহ গুনগ্রাহি রেখে নানান রোগভোগে আক্রান্ত হয়ে গত ২০০৯ সালের ৪টা অক্টোবর নিজ বাড়িতে পরলোক গমণ করেন। কবির জন্মবার্ষিকীতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তার ভক্তবৃন্দ অসংখ্যা শিল্পীদের পদচারনায় টাইলা গ্রামে কবির বাড়িতে তিল ধারনের ঠাই নেই। এই উৎসব চলবে আগামীকাল রবিবার গভীর রাত পর্যন্ত। তবে বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিকট কবির ভক্তদের দাবী তার বাড়িতে একটি বসতঘর নির্মাণের পাশাপাশি কবির গানগুলো সংরক্ষনের জন্য একটি পাঠাগার নির্মাণ প্রয়োজন।