শওকত হাসান, তাহিরপুর ঃ-
পৌষ মাসের শুরু থেকেই বোরো ধানের চারা রোপণের উপযুক্ত সময়। এসময় কৃষকরা বীজতলা থেকে (জালাপুড়া) চারা সংগ্রহ করে জমিতে চারা রোপণ করে। তাহিরপুর উপজেলায় জমিতে ধানের চারা রোপণ করতে বড়দের সাথে তাল মিলিয়ে ভোর থেকে সকাল ১১টা পর্যন্ত অনেক শিশুকে বীজতলা থেকে চারা সংগ্রহের কাজ করতে দেখা যায়। ডিসেম্বর ও জানুয়ারির প্রথম দিকে স্কুলের তেমন চাপ না থাকায় শিশুরা অনেকই এ কাজে লিপ্ত হয়। এছাড়াও এবছর কৃষি উপকরণসহ কৃষি শ্রমিকের মূল্য বৃদ্ধির কারণে বোরো আবাদ করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন হাওড় পাড়ের কৃষকরা। হাতে নগদ টাকা না থাকায় অনেকেই জমি রোপণের টাকার জন্য ধার দেনা করছেন। অনেকে এনজিও ঋণ নিয়েছেন, অনেকে মহাজনী ঋপ নিয়ে টেনে টুনে কোনো রকম জমি রোপণ করছেন। জমি রোপণের পর রয়েছে সেচ, সারসহ কীটনাশক ব্যয়। সব মিলিয়ে কৃষক অনেকটা দিশেহারা হয়ে পড়ছেন। কি করবেন বুঝতে পারছেন না। মাটিয়ান হাওরে ঘুরতে গিয়ে কথা ৮-১০ বছর বয়সের রিয়াদ মিয়া, রবিন, রাহুল, মেহেদীর সাথে কথা হয়। তারা জানায়, এখন স্কুলে যাওয়া চাপ নাই। তাই আমরা ভোর সকালে চারা সংগ্রহ করতে আসি। প্রতি চারার মুইট (আটি) ২টাকা করে দেয়। প্রতিদিন ৬০-৭০টা মুইট সংগ্রহ করতে পারি। এ বিষয়ে মাটিয়া হাওর পাড়ের কৃষক শাহানশাহ বলেন, চারা সংগ্রহের কাজটা সহজ হওয়ায় সকাল হলেই কাজ করতে আগ্রহী অনেক শিশুদের পাওয়া যায়। তা ছাড়া চারা সংগ্রহের কাজে বড় শ্রমিক আসতে চায়না। কারণ এ বছর শ্রমিকের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে অনেক। গত বছর ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা শ্রমিকের মজুরী ছিলো। এ বছর শ্রমিক মজুরি ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা। মজুরী বৃদ্ধি নিয়ে মাটিয়ান হাওর পাড়ের কৃষক সাজিবুল মিয়া বলেন, বর্তমানে নিত্যপ্রয়োজনীয় সব কিছুর বাজার মূল্য বৃদ্ধির কারনে কৃষি শ্রমিকের মূল্যও বেশি। তবে রোপণের শুরুর দিকে শ্রমিক সংকট ও শ্রমিকের মূল্য অধিক হলেও এখন দিন দিন তা কমে আসছে। এবছর অন্যান্য বছরের তুলনায় আবহাওয়া ভালো থাকায় উপজেলায় এবার বোরো ফসলের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে অনেকেই মনে করছেন। তাহিরপুর সদর ইউনিয়নের ভাটি জামালগড় গ্রামের শ্রমিক সেতু বর্মন বলেন, বাজারে সব কিছুর দর বেশি সে কারণেই এবার কৃষি শ্রমিকের দরও একটু বেশি। এ বছর শুরুতে শ্রমিকের মূল্য ৬০০টাকা ছিলো এখন ৫০০টাকায় যেতে হয়। অনেকে কাজ না পেয়ে বাড়িতে চলে যায়। শনির হাওর পাড়ের কৃষক শাহিন মিয়া ও আরিফ মিয়া জানান, গত বছর থেকে এবার সবকিছুতে দাম বেড়েছে। বীজ ধান, সার, কীটনাশকসহ রোপণ শ্রমিকের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে মাত্রাতিরিক্তভাবে। কোনোটাই আর কমে পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে উৎপাদন খরচের ব্যয়ভার নিয়ে কিছুটা চিন্তিত হয়ে পড়ছেন তারা। তারা আরোও জানান, প্রতি কিয়ার (৩০শতক) জমি পাওয়ার ট্রিলারে চাষাবাদ করতে গিয়ে পাওয়ার টিলার মালিককে কিয়ার(৩০শতক) প্রতি ৭০০ টাকা দিয়েছেন। গত বছর এক কিয়ার জমি চাষাদ করতে টিলার মালিকরা ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা নিতেন। এবার ৭০০ টাকার কম তারা মানছেন না। তাহিরপুর সদর রতনশ্রী গ্রামের পাওয়ার টিলার মালকি উজ্জল মিয়া জানান, বর্তমানে ডিজেলের বাজার দর রয়েছে প্রতি লিটার ১১০ টাকা। এবার প্রতি একর জমি চাষাবাদ করে ৭০০ টাকার কম নিলে পোষাবেনা। তাহিরপুর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা হাসান উদ-দৌলা জানান, এবছর ১৭ হাজার ৩শত ৯৩ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। তবে আশা করা যায় আবহাওয়া ভালো থাকলে লক্ষমাত্রা অতিক্রম করতে পারে। তিনি আরোও বলেন, ধান রোপণে কৃষকদের রাইস প্ল্যান্টার দিয়ে রোপণ করার পরামর্শ দিচ্ছি। রাইস প্ল্যান্টার দিয়ে জমি রোপণ করলে শ্রমিকের ঘাটতি পূরণ হবে। এছাড়াও যে কোনো বিষয়ে কৃষকের সোনালী ফসল রক্ষায় উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সার্বক্ষণিক কৃষকের পাশে থাকবে।