স্টাফ রিপোর্টার ::
প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) গঠনের ১৮ দিন পেরিয়ে গেলেও সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার মহালিয়া হাওর উপ-প্রকল্পের একটি বাঁধেও শুরু হয়নি ফসল রক্ষা বাঁধের নির্মাণ কাজ। চলতি বছরের ২ জানুয়ারী মহালিয়া হাওরে ৪ টি (৫৬, ৫৭, ৫৮ ও ৫৯ নং) প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) অনুমোদন দেয় তাহিরপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন ও মনিটরিং কমিটি। কমিটি গঠনের ১৮দিন পেরিয়ে গেলেও ঐসব বাঁধে এক টুকরো মাটিও ফেলা হয়নি। বাঁধের কাজ সময়মতো শুরু না করায় নির্ধারিত সময়ে শেষ হবে না এসব বাঁধের কাজ। এতে ক্ষুব্ধ স্থানীয় কৃষকরা।
স্থানীয় কৃষকরা বলছেন, প্রতিবছরই সময় মতো বাঁধের কাজ শুরু না হয়ে কাজ শুরু হয় এক-দেড় মাস পর। যার কারণে বাঁধ মজবুত হয়না। এতে আগাম বন্যার ঝুঁকিতে পড়তে হয়। যেকারণে হাওরের একমাত্র বোরো ফসল গোলায় তুলতে দুশ্চিন্তায় সময় কাঁটে কৃষকদের।
সরেজমিনে মহালিয়া হাওরে গিয়ে ৫৬, ৫৭, ৫৮ ও ৫৯ নং পিআইসির ফসল রক্ষা বাঁধে মাটি ফেলার কোনো যন্ত্রাংশ কিংবা কোনো শ্রমিক পাওয়া যায় নি। এমনকি এসব বাঁধের সভাপতি বা সদস্য সচিবকেও দেখা যায় নি। মহালিয়া হাওর উপ-প্রকল্পের ৫৬ নং পিআইসি’র সভাপতি বিমেলেন্দু তালুকদার, ৫৭ নং পিআইসি’র সভাপতি রতন মালা দাস ও ৫৮ নং পিআইসি’র সভাপতি মো. হাবুল মিয়া ও ৫৯ নং পিআইসি’র সভাপতি লুতফুর রহমান বাঁধের দায়িত্বে রয়েছেন।
মহালিয়া হাওর পারের কৃষক ফজলুল হক বলেন আমাদের একমাত্র বোরো ফসলের উপর নির্ভর করে আমাদের জীবন চলে। প্রতি বছর এই সময়ের আগে আমাদের বাঁধের অধিকাংশ কাজ শেষ হয়ে যায়, কিন্তু এই বৎসর এখন পর্যন্ত বাঁধে এক কোদাল মাঠিও পরেনি। যার কারণে কৃষকরা দুশ্চিন্তায় দিন পার করছেন। আমরা কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই অনতিবিলম্বে বাঁধের কাজ শুরু করেন নতুবা কৃষকরা আন্দোলন শুরু করবে তখন পালাবার পথ থাকবে না।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন মনিটরিং কমিটির সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অমল কান্তি কর বলেন, এই বৎসর প্রশাসনের লোকজন পিআইসি কমিটি গঠন করেছে, তারা মনিটরিং কমিটির কোন সদস্যকে অবগত করেনি কিংবা পরামর্শ নেয়নি। আগাম বন্যায় যদি বাঁধ ভেঙে আমাদের একমাত্র বোরো ফসলের কোন ধরনের ক্ষতি হলে এর দায়ভার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কে বহন করতে হবে।
বাঁধে মাটি না ফেলার বিষয়টি স্বীকার করে মহালিয়া হাওর উপ-প্রকল্পের ৫৭ নং পিআইসি’র সভাপতি রতন মালা দাস বলেন, গাড়ি আনতে কিছুটা সমস্যা হয়েছে, এজন্য বাঁধের নির্মাণ কাজ শুরু করতে পারিনি।
বাঁধে মাটি না ফেলার বিষয়টি স্বীকার করে একই কথা বললেন ৫৮ নং পিআইসি’র সভাপতি মো. হাবুল মিয়া। তিনি বলেন, গাঁওছিয়া থেকে গাড়ি আসলে কাজ শুরু করা হবে। টাকা দেরিতে পাওয়ায় এমনটা হয়েছে।
এবিষয়ে তাহিরপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন ও মনিটরিং কমিটির সদস্য সচিব ও পাউবো’র উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. মনির হোসেন বলেন, পিআইসিদের তো আমরা টাকা দিয়েছি, তারপরও কেন তারা কাজ শুরু করবেন না বিষয়টি নিয়ে কথা বলবো তাদের সাথে।
সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) বিজন কুমার সিংহ বলেন, বাঁধের কাজ দ্রুত শুরু করতে হবে। বিষয়টি নিয়ে তাহিরপুরের ইউএনও ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তার সাথে কথা বলবেন বলেও জানান তিনি।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের প্রলয়ংকরী আগাম বন্যায় সুনামগঞ্জের বোরো ধানের সম্পূর্ণ ফলন নষ্ট হওয়ার পর অনিয়ম ও দুর্নীতি প্রতিরোধে সংশোধন হয় ‘কাজের বিনিময়ে টাকা’ (কাবিটা) নীতিমালা। সংশোধিত নীতিমালায় বলা হয়েছে বাঁধের কাজ ১৫ ডিসেম্বর শুরু করে আবশ্যিক ভাবে ২৮ ফেব্রুয়ারীর মধ্যে বাঁধের নির্মাণ কাজ সমাপ্ত করতে হবে। কাজের আর্থিক মূল্যের হিসাবে প্রতি ২৫ লাখ টাকার একটি করে স্কিম প্রস্তুত করে তার জন্য বাঁধের পার্শ্ববর্তী কৃষি জমির মালিকদের নিয়ে একটি করে পিআইসি গঠন করতে হবে।