জামিউল ইসলাম তুরান, শান্তিগঞ্জ:
বাঁশ-বেঁত শিল্প বাঙালি সংস্কতির একটা বড় অংশ। আদিকাল থেকেই বাঁশ-বেঁত দিয়ে তৈরি ঘরের কাজের বিভিন্ন জিনিসপত্র ব্যবহার করে আসছে মানুষ। একটা সময় বাঁশ, বেঁত, শীতলপাটি, চাটাইয়ের তৈরিকৃত জিনিসের বেশ কদর ছিল। বর্তমানে বাজারে প্লাস্টিকের কদর বাড়ায় এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে শান্তিগঞ্জ উপজেলার ঐতিহ্যবাহী বাঁশ ও বেঁত শিল্প। এ কারণে উপজেলার হাটবাজারগুলোতে বাঁশ-বেঁতের তৈরি শিল্পের আগের মতো জৌলুশ নেই। এ শিল্পের সাথে জড়িত থাকা পরিবারগুলো মানবেতর জীবনযাপন করছেন। দুই দশক আগেও শান্তিগঞ্জ উপজেলার প্রতিটি গ্রামের ঘরে ঘরে ছিল বাঁশের তৈরি সামগ্রীর কদর। কালের পরিবর্তনের সাথে সাথে বাঁশের সামগ্রী ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে। অপ্রতুল ব্যবহার, বাঁশের মূল্য বৃদ্ধির কারণে বাঁশ-বেঁত শিল্প আজ হুমকির মুখে। এসব পরিবার এখন সরকারের দিকে তাকিয়ে আছে। তাদের চাওয়া, সরকারিভাবে কোনো সুযোগ-সুবিধা পেলে আবারও ফিরে আসতে পারবে হারানো শিল্প। বৃদ্ধি পাবে গ্রামবাংলার প্রাচীন ঐতিহ্য বাঁশ ও বেঁতের তৈরি হস্ত ও কুঠির শিল্পের কাজ, এমনটাই সবার আশা। জানা যায়, একসময় উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ঘরে ঘরে তৈরি হতো নিত্য প্রয়োজনীয় বাঁশ ও বেঁতের হরেক রকম পণ্যসামগ্রী। যার মধ্যে ছিল কুলা, ডালা, ধান রাখার জন্য বাশের চাটাই, হাঁস-মুরগি বন্ধ করে রাখার খাঁচা, মাছ ধরার জোলাঙ্গা, চাঁই, বিভিন্ন ঢাকনা, পলো, মই,টোপা, কুড়ি চালুন, টুপড়ি, চালনি, ঘাস কাটার খাঁচা, বসার মোড়া, বেঁতের ধামা, চেয়ার, টেবিল, দোলনা, পাখা, ডালা, ধান সংরক্ষণে রাখার রবতের মাচা, গ্রাম বাংলার বিখ্যাত শীতলপাটি ইত্যাদি। গোপাল দেব নাথ বলেন, আগে বাঁশে-বেঁতের তৈরি জিনিসপত্র নিজেরা বাড়িতে তৈরি করে বাজারে বিক্রি করেছি। আশানুরূপ লাভ হতো। তবে এখন আগেরমত লাভ হয় না। রাত-দিন কষ্ট করে যা তৈরি করি সে তুলনায় বিক্রি নেই। অনেক দুঃখ-কষ্টে দিন কাটছে আমাদের। সরকারি ভাবে কোনো সাহায্য-সহযোগিতাও পাচ্ছি না। প্রদীপ দেব নাথ বলেন, কর্মসংস্থান সংকুচিত হওয়ায় আমরা এখন অনেক কষ্টে দিনাতিপাত করছি। শত প্রতিকূলতার মধ্যে পুরোনো পেশা ধরে রাখতে চেষ্টা করছি। বর্তমানে প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি পণ্যের উপর ঝুঁকছে মানুষ। আমরা সরকারের পক্ষ থেকে ক্ষুদ্র ঋণ সহায়তা ও মাসিক ভাতা চাই। শান্তিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আনোয়ার উজ জামান বলেন, গত বছর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় প্রকল্পের অধীনে ১৫ দিন ব্যাপী তাদেরকে দু’টি প্রশিক্ষণ দিয়েছি। আর মার্কেটিং করার বিষয়েও তাদেরকে সহায়তা করার চেষ্টা করছি। সুনামগঞ্জ জেলা বিসিক কার্যালয়ের উপ-ব্যবস্থাপক এম.এন.এম আসিফ বলেন, শীতলপাটিকে জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিতে শিল্প মন্ত্রণালয়ে প্রক্রিয়াধীন আছে। আশাকরি, জিআই পণ্য হিসেবে শিগগিরই স্বীকৃতি পাবে। এটা হলে এ শিল্পের সাথে জড়িতদের বড় ধরনের দ্বার উন্মোচন হবে। এ শিল্পের সাথে জড়িতদের তথ্য সংগ্রহ করে তালিকা তৈরি করেছি। ধারাবাহিকভাবে তাদের প্রশিক্ষণ, আর্থিক সহয়তা ও ক্ষুদ্র ঋণ দিব।