তাহিরপুরে দুই মহাসাধকের মিলনমেলা

শওকত হাসান, তাহিরপুর ঃ-
তাহিরপুরের সীমান্ত এলাকায় দুই ধর্মের দুই আধ্যাত্মিক মহাসাধকের মিলনমেলা শুরু হয়েছে। একই সাথে দুটি উৎসব উপলক্ষে তাহিরপুর উপজেলায় এখন উৎসবের আমেজ। এ দুটি উৎসব হচ্ছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম বৃহৎ মহোৎসব শ্রীশ্রী অদ্বৈত মহাপ্রভুর রাজারগাঁও লাউড় নবগ্রাম আখড়াবাড়ি সংলগ্ন যাদুকাটার তীরবর্তী পণতীর্থধামে প্রায় ৭’শ বছরের প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী ¯œানযাত্রা এবং হযরত শাহজালাল (র.) এর ৩৬০ আউলিয়ার অন্যতম সঙ্গী হযরত শাহ আরেফিন (র.) এর মহাপবিত্র ওরস শরীফ। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক অনন্য নিদর্শন পণতীর্থ গঙ্গা¯œান ও শাহ আরেফিনের (রহ.) ওরস শরীফ। ঐতিহ্যবাহী এ দুটি অনুষ্ঠান ঘিরে সনাতন ও মুসলিম ধর্মাবলম্বী লক্ষ লক্ষ ভক্ত-আশেকান ও দর্শনার্থী বর্তমানে যাদুকাটা নদীর দুই পাড় ও মেঘালয় পাহাড়ঘেঁষা সীমান্তবর্তী লাউড়েগড় এলাকায় অবস্থান করছেন। জানা গেছে, দুই আধ্যাত্মকি মহাসাধকের ভক্তবৃন্দের তিনদিন ব্যাপী মিলনমেলায় রবিবার রাত ৯টা ১৪ মিনিট ১৫ সেকেন্ড থেকে শুরু হয়ে ভোর ৪টা ৬ মিনিট ৫০ সেকেন্ড পর্যন্ত (মধুকৃষ্ণা ত্রয়োদশী তিথি) গঙ্গা¯œান অনুষ্ঠিত হবে। মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত জাদুকাটা নদী তীরের বালুচরে বসবে বারুণি মেলা। আর এর মাধ্যমেই অনুষ্ঠানের কার্যক্রম শেষ হবে। অন্যদিকে রবিবার সন্ধ্যা থেকে শুরু হয়ে বুধবার সকালে আখেরি মোনাজাতের মধ্যদিয়ে উপজেলার লাউড়েরগড় সীমান্তে আরেফিনের ওরস শেষ হবে। এই দুটি উৎসবকে ঘিরে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসা ভক্ত-আশেকানের আগমনে পুরো এলাকা সম্প্রীতির এক মহা মিলনমেলায় পরিণত হয়। এ উপলক্ষে বালুচরে বারুণী মেলা ও ওরস মোকাম এলাকায় মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী মিলনমেলাকে শান্তিপূর্ণভাবে স¤পন্ন করার লক্ষে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসন, তাহিরপুর ও বিশম্ভরপুর উপজেলা প্রশাসন আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। এতে উৎসব দুটির আখড়াবাড়ি, পণতীর্থ ধামে গঙ্গাøান, গড়কাটি ইসকন মন্দির, বারুণী মেলা ও ওরস মোকাম এলাকায় পুলিশ, বিজিবি, আনসার সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত যৌথ বাহিনীর অস্থায়ী ক্যা¤প বসানো হয়েছে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালতের পাশাপাশি মেটাল ডিটেক্টর দ্বারা আগতদের দেহ, ব্যাগ তল্লাশীসহ ডিএসবি, সাদা পোশাকধারী পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থার বিশেষ নজরদারি এবং ঝুঁকিপূর্ণ সড়কগুলোতে দিবারাত্রি যাতায়াতকারীদের নিরাপত্তায় পুলিশ ও বিজিবি টহল দল মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়াও উৎসবস্থল ঘিরে বসানো হয়েছে সিসি ক্যামেরা মনিটরিং ইউনিট। যানবাহনের ভাড়া ও যাতায়াত ব্যবস্থার বিষয়ে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শাহ আরেফিন (রহ.) ওরস উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব আলম সাব্বির জানান, শাহ আরেফিন (রহ.) ওরস ও মেলা উদযাপনে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন এবং স্থানীয়দের সঙ্গে মতবিনিময় হয়েছে। এদিকে শ্রী অদ্বৈত জন্মধাম কেন্দ্রীয় কমিটির তাহিরপুর উপজেলা কমিটির কার্যনির্বাহী সদস্য সুধাংশু মোহন গাক্সগুলী রতন জানান, গঙ্গা¯œান ও বারুণী মেলা শান্তিপূর্ণভাবে উদযাপনের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। ¯œান ও মেলা শেষে পুণ্যার্থীরা যেন নিরাপদে বাড়ি ফিরতে পারেন, এ বিষয়টি এবারও সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুপ্রভাত চাকমা জানান, এলাকায় আগত দর্শনার্থীদের নিরাপত্তায় প্রশাসনের প্রতিটি পর্যায় থেকে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুনঃ