প্লাস্টিক দূষণের সমাধানে শামিল হই সকলে” এই প্রতিপাদ্য নিয়ে পালিত হল বিশ্ব পরিবেশ দিবস

স্টাফ রিপোর্টার::
‘‘প্লাস্টিক দূষণের সমাধানে শামিল হই সকলে” এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে সকাল ১০ ঘটিকায় জেলা প্রশাসনের আয়োজনে এবং সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) ও বাংলাদেশ বন্ধু ফাউন্ডেশন সহ বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলোর সহযোগিতায় পালিত হল বিশ^ পরিবেশ দিবস-২০২৩। দিবসটি উপলক্ষে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় হতে এক বর্ণাঢ্য র‌্যালি শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিন করে পুনরায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এক আলোচনা সভায় মিলিত হয়। আলোচনা সভায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) বিজন কুমার সিংহ এর সভাপতিত্বে জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। সভায় বক্তারা পরিবেশ দিবসের গুরুত্ব উল্লেখ করে বলেন যে, আগামীর বাংলাদেশ ভবিষৎ নাগরিকদের জন্য বাসযোগ্য করার জন্য আমাদেরকে এখন থেকে দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহন করতে হবে। টেকসই উন্নয়ন এজেন্ডা ২০৩০ সালের মধ্যে আমাদের লক্ষ্য অর্জন করতে হলে আমাদেরকে আমাদের নিজ থেকে শুরু করতে হবে। প্রথমে পরিবার, তারপর গ্রাম এভাবে ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে। স্থানীয় ভাবে সুনামগঞ্জের পরিবেশগত দিক বিবেচনায় রেখে পরিকল্পনা গ্রহন করা। যেখানকার জমি বছরে ৭-৮ মাস পানির নিচে থাকে, যেখানে পর্যাপ্ত গাছ লাগানো সম্ভব হয়না এবং এলাকার জনগনের চাহিদার কারনে দিনে দিনে গাছ-পালা বিপন্ন হতে চলেছে। তাই প্রাকৃতিক ভাবে এই এলাকার উপযোগী বৃক্ষ রোপন করা যাতে একদিকে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা হবে, অন্য দিকে জন চাহিদা পূরন সহ বিপন্ন হতে চলা মাছ, জীব-জন্তুু, কীট-পতঙ্গ রক্ষা পাবে। প্লাস্টিক বর্জ্যসহ ব্যাপকভাবে বর্জ্য ফেলার কারণে সুনামগঞ্জে’র সুরমা নদী এখন বাংলাদেশের অন্যতম দূষিত নদীতে পরিণত হয়েছে। বিশে^র প্রথম দেশ হিসেবে বাংলাদেশে ২০০২ সালে পলিথিনের ব্যবহার নিষিদ্ধ করে আইন করা হলেও, কার্যকর প্রয়োগের অভাবে প্লাস্টিক থেকে পরিবেশ দূষণ শুধু অব্যাহতই নয় বরং বৃদ্ধি-ই পেয়েছে। তা ছাড়া বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন (১৯৯৫) এর ধারা ৬(ক) অনুসারে পলিথিন শপিং ব্যাগ নিষিদ্ধ হলেও সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক ও লেমিনেটেড প্লাস্টিকের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়নি। এর ফলে আইনের আওতায় কিছু পলিথিনের ব্যবহার চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ থাকায় প্লাস্টিক দূষণ অব্যাহত রয়েছে। বৈশি^ক মোট প্লাস্টিক দূষণের ২.৪৭ শতাংশ বাংলাদেশে হয়ে থাকে এবং ব্যবহৃত প্লাস্টিকের মধ্যে মাত্র ৩৬ শতাংশ পুর্নব্যবহার করা হয়। এছাড়াও উন্মুক্ত আলোচনা সভায় সুনামগঞ্জ শহরের পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা বৃদ্ধি করার উপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়। বিশ^ পরিবেশ দিবস-২০২৩ সামনে রেখে প্রাকৃতিক সম্পদের টেকসই ব্যবস্থাপনায় শুদ্ধাচার নিশ্চিতে টিআইবি’র নি¤েœাক্ত সুপারিশ সমূহ উত্থাপন করা হয়:-
পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫Ñ এর সংশ্লিষ্ট ধারা সংশোধনীর মাধ্যমে সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক ও লেমিনেটেড প্লাস্টিক নিষিদ্ধ করতে হবে। প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদন ও ব্যবহার হ্রাস এবং প্লাস্টিক বর্জ্যরে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য প্লাস্টিক দূষণসংক্রান্ত একটি ‘‘বিধিমালা’’ প্রণয়ন করতে হবে। সম্ভাব্য ক্ষেত্রসমূহে প্লাস্টিকের ব্যবহার নিষিদ্ধ বা সীমিত করার পাশাপাশি বায়েডিগ্রেডেবল প্লাস্টিকের উৎপাদন ও ব্যবহারকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে প্রণোদনার ব্যবস্থা করতে হবে। প্লাস্টিকের বেআইনি উৎপাদন, বাজারজাতকরণ ও ব্যবহার রোধে দূষণ-কর আরোপ এবং প্লাস্টিক দূষণের সঙ্গে জড়িত ব্যাক্তি, প্রতিষ্ঠান ও প্রকল্পের বিরুদ্ধে পরিবেশ আইনের স্বাধীন ও কার্যকর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। সিটি করপোরেশন ও পৌরসভা কর্তৃক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমে প্লাস্টিক বর্জ্য আলাদা করে সংগ্রহ, পৃথক্করণ, পরিবহণ, পরিশোধন করতে হবে এবং প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আধুনিক ও উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি করতে হবে। প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উন্নত করে উৎপাদিত প্লাস্টিক পুর্নব্যবহার ও পুনঃচক্রায়ন নিশ্চিতে সরকার ও বেসরকারি খাত কর্তৃক বিভিন্ন প্রণোদনামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট-১৪ এর অর্জন নিশ্চিতে প্লাস্টিক পণ্য হতে নদী ও সমুদ্র দূষণ রোধের পাশাপাশি সমুদ্র সম্পদের সংরক্ষণ নিশ্চিতে সমুদ্র অধিদপ্তর, কোস্ট গার্ড, নৌবাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নিয়মিত তদারকি কার্যক্রম জোরদার করতে হবে। দূষণ রোধে ব্যবহৃত তহবিলসহ সার্বিকভাবে পরিবেশ সুরক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে এবং আর্থিক লেনদেন ও কর্মসম্পাদন প্রতিবেদন স্বপ্রণোদিতভাবে প্রকাশ করতে হবে। প্লাস্টিক দূষণের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে ব্যাপক সচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ ও বাস্তবায়নে সাধারণ জনগণসহ সংশ্লিষ্ট সকল অংশীজনের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।

নিউজটি শেয়ার করুনঃ