তাহিরপুরে শেষ হয়নি ফসল রক্ষা বাঁধের নির্মাণ কাজ

তানভীর আহমেদ:
কাবিটা (কাজের বিনিময়ে টাকা) নীতিমালা অনুযায়ী ২৮ ফেব্রুয়ারির (মঙ্গলবার) মধ্যে হাওরের বাঁধ নির্মাণ কাজ শতভাগ শেষ করার কথা। অথচ ৪ মার্চ (শনিবার) সকাল পর্যন্ত তাহিরপুর উপজেলায় ৬০-৬৫ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। যদিও প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, মঙ্গলবার পর্যন্ত বাঁধের ৭০ ভাগ কাজ স¤পন্ন হয়েছে। আগামী ৭ মার্চের মধ্যে সবকটি বাঁধের মাটি ভরাটের কাজ স¤পন্ন হবে বলেও জানান তারা। তবে স্থানীয় লোকজনের দাবি, এ পর্যন্ত ৬০ থেকে ৬৫ ভাগ কাজ হয়েছে। অনেক বাঁধে এখনও মাটির কাজই শেষ হয়নি। সঠিক সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় আগাম পাহাড়ি ঢলে ফসল রক্ষা বাঁধ ভেঙ্গে বোরো ফসলের ক্ষতির আশংকা রয়েছে। তাদের অভিযোগ, হাওরের গুরুত্বপূর্ণ অনেক বাঁধের কাজে ঢিলেমি লক্ষ্য করা গেছে। বাঁধের কাজে ঢিলেমিতে অসন্তুষ্ট হাওর বাঁচাও আন্দোলনের নেতারাও। তারা বলছেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বরাবরই নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করে না। ফলে এনিয়ে লাখ লাখ কৃষক উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা ও আতঙ্ক থাকে। সেই সাথে ঝুঁকিতে থাকে হাওরাঞ্চলের বোরো ফসল। এদিকে গত শুক্রবার সকাল ১১টায় ফসল রক্ষা বাঁধের নির্মাণ কাজে অনিয়ম ও কাজ চলমান না থাকায় মহালিয়া হাওরের ১৬ নং ও ১৯ নং পিআইসির সভাপতি ফজলুল হক ও মোসাহিদকে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) আসাদুজ্জামান রনি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে তাদের আটক করেন। তাহিরপুরের টাক্সগুয়ার হাওর পাড়ের কৃষক নাজমুল ইসলাম বলেন, এখনও বাঁধ নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি। আমরা খুবেই চিন্তাই আছি আগাম বন্যার আশংকায়। সরকার ফসল রক্ষা বাঁধের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে প্রতিবছর বাঁধ নির্মাণ ও মেরামতের জন্য কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়। কিন্তু ঠিকমত কাজ হয় না। তিনি বলেন, বাঁধের কাজ তো শেষ হয়নি। উল্টো বাঁধের নামে এখানকার পরিবেশ নষ্ট করা হচ্ছে। বাঁধ নির্মাণের নামে এক্সভেটরের তান্ডবে ধ্বংস হচ্ছে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন টাক্সগুয়ার হাওর। হাওর সংলগ্ন পাটলাই নদীর পাড় কেটে নিয়মনীতি লঙ্ঘন করে মাটি উত্তোলন করায় নদী ও নদীর পারের সারিবদ্ধ হিজল করচের গাছগুলো হুমকিতে পড়েছে। শনি হাওরের কৃষক রিপন মিয়া বলেন, সারা বছর কষ্ট করে জমিতে ফসল ফলাই, আর সেই ফসল গুলো যদি অকাল বন্যায় তলিয়ে যায় তাহলে তো মাথায় হাত পড়বে আমাদের। তখন কিন্তু না খেয়ে মরতে হবে আমাদের। তাই বলছি দ্রুত হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ শেষ করে আমাদের ফসলগুলো নিরাপদ করুন। উপজেলার মাতিয়ান হাওরের কৃষক রফিকুল ইসলাম বলেন, যত দ্রুত সম্ভব বাঁধের কাজ শেষ করা প্রয়োজন। বৃষ্টিপাতের দিন আসতেছে, বৃষ্টি হলে তো পড়ে বাঁধ মজবুত হবে না। ফসল রক্ষা করার কথা মাথায় রেখে দ্রুত বাঁধের কাজ শেষ করার দাবী জানাই। সংশ্লিষ্টরা জানান, চলতি বছরে তাহিরপুর উপজেলায় ১১০টি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) গঠন করা হয়েছে। এসব প্রকল্পে প্রাক্কলন ব্যয় ধরা হয়েছে ২০ কোটি টাকা। তাহিরপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন ও মনিটরিং কমিটির সদস্য সচিব ও পাউবোর উপ-সহকারী প্রকৌশলী শওকত উজ্জামান বলেন, ২৮ ফেব্রুয়ারি বিকেল পর্যন্ত ৭০ ভাগ কাজ স¤পন্ন হয়েছে। আশা করছি প্রতিটি বাঁধে মাটি ভরাটের কাজ শেষ হবে আগামী ৭ মার্চের মধ্যেই। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং প্রকল্প বাস্তবায়ন ও মনিটরিং কমিটির সভাপতি সুপ্রভাত চাকমার সাথে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

নিউজটি শেয়ার করুনঃ