ছাতক প্রতিনিধি::
ছাতকের জাউয়াবাজার ইউনিয়নের বিনন্দপুর গ্রামে বসত ভিটা রক্ষায় টিনের তৈরি তাবুতে রাতভর জেগে পাহারা দেন আফিয়া বেগম, জীবন বাঁচাতে গ্রাম ছাড়া রয়েছেন তার অসহায় স্বামী আব্দুল সালাম। জানা যায়, ২৫-২৬ বছর পূর্বে উপজেলার চরমহল্লা ইউনিয়নের সিদ্দারচড় গ্রাম থেকে এসে শুশুড়বাড়ী সুত্রে জাউয়াবাজার ইউনিয়নের বিনন্দপুর গ্রামে বসতি গড়েন মৃত. জুনাব আলীর ছেলে আব্দুল সালাম। তিনি এক সময় বিনন্দপুর গ্রামের যুক্তরাজ্য প্রবাসী আছাব আলীর নিকট থেকে সতিশ প্রকাশিত ছত্তিশ মৌজাস্থিত এস, এ জেএল নং ৩৩০. এস এ খতিয়ান নং ৯৫৪ ও ৯০৫, এস এ দাগ নং ৩৫৯, সাবেক বোরো বর্তমানে বোর ও ভিট রকম ৭ শতাংশ ভুমি ক্রয় করেন। যুক্তরাজ্য প্রবাসী আছাব আলী এ সংক্রান্ত একটি অঙ্গীকারনামাও সম্পাদন করেন দেন। পরবর্তি সময়ে এই জায়গায় মাটি ভরাট ও পর্যায়ক্রমে ঘর নির্মাণের কাজ শুরু করেন আব্দুল সালাম। ঘর নির্মাণ কাজের শুরুতে শিরনি বিতরণও করা হয়। তখনও সব কিছু ঠিকভাবে চলছিল। আব্দুল সালাম ও তার স্ত্রী আফিয়া বেগমের অভিযোগ গত ৮ নবেম্ভর ২০২২ ইং তারিখে যুক্তরাজ্য প্রবাসী আছাব আলীর ইন্ধনে একই গ্রামের আমির আলির ছেলে আলাল মিয়া ও অন্যান্য সহযোগীরা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে বসতবাড়ীতে এসে হামলা ও আব্দুল সালামকে মারপিট করে গুরুতর আহত করা হয়। এমনকি ভিটা মাটি ত্যাগ করার জন্য হুমকি প্রদান করা হয়। স্থানীয়রা আব্দুল সালামকে উদ্ধার করে প্রথমে কৈতক হাসপাতালে নিয়ে যান। তার অবস্থা আশংকাজনক হওয়াতে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি ও চিকিৎসা দেওয়া হয়। এ ঘটনায় আব্দুল সালাম বাদী হয়ে আমল গ্রহনকারী জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত, ছাতক, সুনামগঞ্জ গত ২৮ নবেম্ভের ২০২২ ইং তারিখে সি, আর মোকদ্দমা নং ৫৩৮/২২ইং দায়ের করা হয়। এতে একই গ্রামের আমির আলির ছেলে আলাল মিয়া, সর্দার আলীর ছেলে রসিক আলী, আসিক মিয়া, মালদার আলীর ছেলে আঙ্গুর মিয়া, মানিক মিয়া ও রজব আলীর ছেলে আবদাল মিয়াকে আসামী করা হয়। এর পরও প্রতিপক্ষের লোকজন আব্দুল সালামের বসতবাড়ী জোরপূর্বক দখল করে নেওয়ার অপচেষ্টা করেন এবং হুমকি ধমকি প্রদর্শন করা অব্যাহত রাখেন। এ ঘটনায়ও আব্দুল সালাম বাদী হয়ে অতিরিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত, ছাতক, সুনামগঞ্জ বিবিধ মোকদ্দমা নং ৬৭৪/২০২২ ইং দায়ের করা হয়। আদালত সুুত্রে ফৌজদারী কার্যবিধি-১৪৪ ধারা মোতাবেক নোটিশ প্রদান করেন ছাতক থানা (জাউয়াবাজার তদন্ত কেন্দ্র) এসআই সুজন চক্রবর্তী। সতিশ প্রকাশিত ছত্তিশ মৌজাস্থিত এস, এ জেএল নং ৩৩০. এস এ খতিয়ান নং ৯০৫, এস এ দাগ নং ৩৫৯, ৩৬৩, ৩৬৪ উল্লেখ করে বলা হয় আপনাদের কোন পক্ষ কতৃক দাঙ্গা, হাঙ্গামা, খুন খারাপিসহ আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটিলে আইন অমান্যকারীর বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। এর পরও প্রতপিক্ষের লোকজন নীরিহ আব্দুল সালামের বসত ভিটা জোরপূর্বক জবর দখলের অপচেষ্টা অব্যাহত রাখেন এমনকি আব্দুল সালাম ও তার পরিবারের লোকজনকে প্রাণনাশের হুমকি প্রদান করেন। এ ঘটনায়ও আব্দুল সালাম বাদী হয়ে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত, ছাতক, সুনামগঞ্জ বিবিধ মামলা নং-১২৬/২২ ইং দায়ের করা হয়। মামলার পর মামলা করেও কোন সুরাহা না পেয়ে আবব্দুল সালাম ও তার পরিবার অসহায় হয়ে পড়েন। অপরদিকে প্রতিপক্ষের লোকজন কতৃক বসতভিটা জোরকপূর্বক জবরদখলের অপচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। তাদের অব্যাহত হুমকি ধমকিতে জীবন বাঁচাতে গ্রামছাড়া অসহায় আব্দুল সালাম। তার স্ত্রী টিনের তাবু তৈরি করে রাসতভিটা পাহারা দেন। কোন উপায়ান্তর না পেয়ে ন্যায় বিচার প্রাপ্তির স্বার্থে গত ২৩ জানুয়ারী সহকারী জজ আদালত ছাতক, সুনামগঞ্জ স্বত্ব মোকদ্দমা নং ০৯/২০২৩ ইং দায়ের করা হয়। এ বিষয়ে বিনন্দপুর গ্রামের আব্দুল হক বলেন যুক্তরাজ্য প্রবাসী আছাব আলী আমার নিকটও কিছু জায়গা বিক্রি করেছেন। কিন্ত দলিল সম্পাদন করে দিচ্ছেন না। শুধু তারিখের পর তারিখ করে যাচ্ছেন। এ বিষয়ে একই গ্রামের আব্দুল মন্নান বলেন যুক্তরাজ্য প্রবাসী আছাব আলী আমার নিকটও কিছু জায়গা বিক্রি করেছেন কিন্ত দলিল সম্পাদন করে দিচ্ছেন না। আব্দুল সালামের বসতভিটা নির্মান কাজের যোগালী একই গ্রামের হীরন মিয়া বলেন, আমি কাজ করছিলাম। হঠাৎ আলাল মিয়া গংরা এসে অতর্কিত ভাবে আব্দুল সালামের উপর হামলা করেন। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। এ বিষয়ে আব্দুল সালামের স্ত্রী আফিয়া বেগম বলেন, মামলার পর মালার দিয়ে কোন সুরাহা পাচ্ছিনা। এখন অসহায় হয়ে পড়েছি। প্রতিপক্ষের লোকজন বসতভিটা ছেড়ে দেওয়ার জন্য হুমকি অব্যাহত রেখেছেন। তারা আমার স্বামীকে মারধর করে ভিটা উচ্ছেদ করারও হুমকি দিয়ে আসছেন। জীবন বাঁচাতে গ্রাম ছাড়া আমার স্বামী। এ বিষয়ে আব্দুল সালাম বলেন, এই জায়গা ২০-২২ বছর ধরে ভোগ দখল করে আসছি। প্রতিপক্ষের লোকজন আছাব আলীর ইন্ধনে ঘর নির্মানে বাঁধা প্রদান করেন। তাদের অব্যাহত নির্যাতনে আমি ও আমার পরিবার অসহায় হয়ে পড়ছি। তিনি সংশ্লিষ্ট সকলের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। এ বিষয়ে অভিযুক্ত আলাল মিয়া মারামারির ঘটনা অস্বীকার করে বলেন, এই জায়গার মালিক জাউয়া গ্রামের একজন। আব্দুল সালাম ৭ শতাংশ জায়গা দাবি করছেন এটা জাল অঙ্গীকার নামা। তিনি আরো বলেন এ বিষয়ে গ্রামপঞ্চায়েত একটি শালিস বৈঠক করেন। ১ লাখ টাকা আব্দুল সালামকে দিয়ে বিষয়টি আপোস মিমাংশা করা হয়। তবে অনুষ্টিত শালিস বৈঠকে আপোস মিমাংসার লিখিত কোন অঙ্গীকারনামা রয়েছে কি না এমন প্রশ্নের জবাব না দিয়ে তিনি এড়িয়ে যান। এ বিষয়ে জাউয়া কোনাপাড়া গ্রামের মৃত. আইয়িদ আলীর ছেলে ফয়ছল আহমদ বলেন, বিনন্দপুর গ্রামের মৃত. চমক আলীর ছেলে মো: বাতির আলীর নিকট থেকে ৪৩৯ নং দলিল মুলে ৩৬৩ নং দাগে ২৪ শাতাংশ ভূমি ক্রয় করেন তার সহোদ ভাই মো. সুরুজ আলী ও মো. সাজ্জাদ মিয়া। তবে আব্দুল সালামের ৩৫৯ নং দাগের ভূমিতে কেন দাবী করছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন আব্দুল সালাম ৩৫৯ দাগে নয় তিনি ৩৬৩ দাগে অবস্থান করছেন। কিন্ত সম্পাদিত ৪৩৯ নং দলিলে বর্ণিত চৌহদ্দি উত্তরে বিক্রিত দাগের অবশিষ্ট ভূমি, দক্ষিনে ৩৫৯ দাগের ভূমি, পূর্বে বিক্রিত দাগের অবশিষ্ট ভূমি ও পশ্চিমে আছাব আলী উল্লেখ করা রয়েছে। সে হিসাবে দক্ষিনে ৩৫৯ দাগে আব্দুল সালাম যথা যথাবাবে রয়েছেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন সড়কের পশ্চিমে ৩৬৩ ও ৩৬৪ দাগের জায়গা রয়েছে। তাহলে প্রশ্ন উঠে ৩৫৯ দাগ ও জায়গা গেলো কোথায় ? এ বিষয়ে জাউয়াবাজার ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল হক বলেন, আলাল মিয়া গংদের এক স্বজনের জায়গাতে ঘর নির্মান করছেন আব্দুল সালাম। গ্রামবাসীকে নিয়ে অনুষ্টিত একটি সালিশ বৈঠকে ১ লাখ টাকা দিয়ে আব্দুল সালামের সাথে আপোস মিমাংশা করে দেওয়া হয়। তবে ঔ সালিশ বৈঠকে আপোস মিমাংশার কোন লিখিত অঙ্গীকারনামা বা আপোসনামা রয়েছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন লিখিত কোন কিছু নেই। এ বিষয়ে এডভোকেট ছায়াদুর রহমান ছায়াদ বলেন, তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য থানা পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। প্রতিবেদন পাওয়ার পর পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহন করবেন আদালত। এ বিষয়ে এডভোকেট মুনির আহমদ বলেন, তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি কে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এছাড়ও এই ভূমিতে ১৪৪ ধারা জারি করেছেন আদালত। এ বিষয়ে ছাতক থানার নবাগত ভারপ্রাপ্ত (কর্মকর্তা) ওসি খাঁন মোহাম্মদ মাইনুল জাকির বলেন বিষয়টি খোঁজ খবর নিয়ে দেখছি। এ বিষয়ে ছাতক উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইসলাম উদ্দিন বলেন, আদালত কতৃক আদেশ এখনো আমার হাতে পৌছায়নি। হাতে পেলে তদন্ত স্বাপেক্ষে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।