স্টাফ রিপোর্টার ::
জাতীয় সংসদে বিল পাসের প্রায় দুই বছর পর জায়গা খুঁজে পেয়েছে সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। যে কাজটি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দ্বন্দ্বের কারণে দীর্ঘদিন ধরেই আটকে ছিল। এর মধ্য দিয়ে ক্যা¤পাসের স্থান নির্ধারণ নিয়ে সুনামগঞ্জের সংসদ সদস্য ও পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান এবং স্থানীয় পাঁচ সংসদ সদস্যদের মধ্যে দ্বন্দ্বের অবসান হয়েছে। এখন সবাই হাওর অঞ্চলের উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠানটিকে এগিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে ঐকমত্যে পৌঁছেছেন। জানা গেছে, সুনামগঞ্জ সার্কিট হাউসে এক বৈঠকে জনপ্রতিনিধিরা সবাই স্বাক্ষর করে ঐকমত্যে পৌঁছানোর কথা বলেন। এ সময় উপস্থিত জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেনকে দ্রুত সময়ের মধ্যে সদর উপজেলার আহসানমারা সেতুর পূর্বপাশে উত্তর ও দক্ষিণে দেখার হাওরে ১০০ একর জায়গার প্রস্তাব পাঠানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়। এ সময় সেখানে সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আবু নাঈম শেখও উপস্থিত ছিলেন। এ বিষয়ে তিনি বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থান নির্ধারণে জঠিলতার অবসান হলো। স্থান নির্ধারণের কঠিন কাজটি আপাতত স¤পন্ন করতে পেরেছি। এখন প্রশাসনিক কাজও শুরু করতে পারবো।”সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০২০ সালের ১৮ নভেম্বর জাতীয় সংসদে সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বিল পাশ হয়। এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহায়তায় শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ ও পরবর্তীতে শিক্ষামন্ত্রী ড. দীপু মনির মাধ্যমে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বিশ্ববিদ্যালয় প্রকল্পটি তৈরিতে ভূমিকা রাখেন। দ্রুততম সময়ে কাজটি করায় তখন সুনামগঞ্জের সর্বস্তরের জনতার ব্যানারে সুনামগঞ্জ স্টেডিয়ামে প্রধানমন্ত্রী ও পরিকল্পনামন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়ে সমাবেশ করে কৃতজ্ঞতা জানানো হয়েছিল। এরপরই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থান নির্বাচন নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যরা। সুনামগঞ্জ-৩ (জগন্নাথপুর-দক্ষিণ সুনামগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য ও পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান চাইছিলেন, সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কের উজানীগাঁও গ্রামের দক্ষিণ প্রান্তে ফসলি (আমন) জমিতে বিশ্ববিদ্যালয়টি স্থাপিত হোক। কিন্তু তাতে বাধ সাধেন সুনামগঞ্জ-৪ (সদর-বিশ্বম্বরপুর) আসনের জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ। তিনি চাইছিলেন, জেলা সদরে বিশ্ববিদ্যালয়টি স্থাপিত হোক। এ নিয়ে তিনি তখন শহরে প্রতিবাদ সমাবেশও করেন। পরবর্তীতে পীর ফজলুর রহমানকে সমর্থন করে আন্দোলনে সংহতি জানান, সুনামগঞ্জ-৫ (ছাতক-দোয়ারাবাজার) আসনের সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক, সুনামগঞ্জ-২ (দিরাই-শাল্লা) আসনের সংসদ সদস্য জয়া সেনগুপ্তা, সুনামগঞ্জ-১ (ধর্মপাশা-জামালগঞ্জ-তাহেরপুর) আসনের সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন ও সুনামগঞ্জ-সিলেট সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট শামীমা আক্তার খানম। পাঁচ সংসদ সদস্যকে তখন জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারাও সমর্থন দেন। তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে গিয়েও পরিকল্পনা মন্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন এবং স্থান নির্ধারণ বৈঠকে সংসদেও মন্ত্রীর বিরোধিতা অব্যাহত রাখেন। এই অবস্থার মধ্যেই চলতি বছরের ১৪ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য (ভিসি) হিসেবে মো. আবু নাঈম শেখকে নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। পাশাপাশি সাধারণ মানুষের স্বার্থ সংরক্ষণ হয় এমন স্থান নির্ধারণ করার জন্য সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ থেকে জেলা প্রশাসককে নির্দেশনা দেওয়া হয়। এর অংশ হিসেবে গত ১৪ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আবু নাঈম শেখ এবং জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর আলম পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নানের ঢাকার দপ্তরে সুনামগঞ্জের পাঁচ সংসদ সদস্যকে নিয়ে বৈঠকে বসেন। ওই বৈঠকেই স্থান নির্ধারণ বিষয়ে জনপ্রতিনিধিরা মৌখিকভাবে ঐকমত্যে পৌঁছান। এরপর গত শনিবার সকালে শান্তিগঞ্জ উপজেলা সদরে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের বাসভবন হিজল বাড়িতে তারা আবারও বৈঠকে বসেন। কিছুক্ষণ পরে সুনামগঞ্জ সার্কিট হাউসে এসে আবারও বসেন তারা। সেখানে উপস্থিত সবাই স্থান নির্ধারণ বিষয়ে একটি কাগজে স্বাক্ষর করেন। সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, “মন্ত্রী ও সব সংসদ সদস্য স্থান নির্বাচনে একমত হয়েছেন। বিধি অনুসারে, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ৭৫ একরের মতো জায়গা লাগে। কিন্তু ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে আমরা ১০০ একর জায়গা অধিগ্রহণের প্রস্তাব করবো।” তিনি বলেন, “দ্রুত সময়ে কাগজ তৈরি করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবরে পাঠাবো। যাতে থমকে যাওয়া কাজটি দ্রুত বাস্তবায়ন হয়।”সুনামগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ বলেন, “সুনামগঞ্জ সদরের আহসানমারা সেতুর পূর্বপাশে উত্তর-দক্ষিণে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হবে। মন্ত্রী মহোদয়ের সঙ্গে আমাদের সব বিরোধের অবসান হলো। এখন তার সহায়তায় কিভাবে দ্রুত প্রশাসনিক কাজ শুরু করা যায় এবং জেলাবাসীর স্বার্থ সংরক্ষিত হয় সেই চেষ্টা সম্মিলিতভাবে করবো আমরা।”পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাস, আশকারা ও আন্তরিকতায় সুনামগঞ্জের উন্নয়নে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বড়ো প্রকল্প এখন বাস্তবায়ন করার পথে। এমপিরা এ বিষয়ে মতবিরোধে জড়িয়েছিলেন, উত্তরে না দক্ষিণে হবে। আমি সুপারিশ করেছিলাম, হাওরে হলে পরিবেশ নষ্ট হবে সরকারের অপচয় হবে। তাই একই স্থানের দক্ষিণে আমন জমিতে প্রস্তাব করেছিলাম।” মন্ত্রী বলেন, “যাক এখন সব সংশয়, সন্দেহ দূর হলো। নতুন করে বন্ধুত্বের বন্ধনে বিষয়টির নি®পত্তি হলো। আমরা সুনামগঞ্জের সাধারণ মানুষের সুবিধার্থে একটি সুন্দর জায়গায় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত করতে যাচ্ছে। স্থান নির্ধারণে আমরা ঐকমত্যে পৌঁছে স্বাক্ষর করে ডিসি সাহেবকে দ্রুত সময়ে কাগজ তৈরি করে দিতে বলেছি।