শওকত হাসান,তাহিরপুর ঃ-
আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত বাংলাদেশের দ্বিতীয় রামসার সাইট তাহিরপুর উপজেলার টাক্সগুয়ার হাওর। প্রসিদ্ধ এ হাওরের হিজলবাগের গাছ কেটে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করছে হাওর পাড়ের কয়েকটি গ্রামের মানুষ। এরাইল্লাকোনা নামের ছোট্ট একটি হাওরের ফসলরক্ষার জন্য ফইল্লার বিলের কান্দার হিজলবাগের শত শত গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। এমন খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে এলাকার সচেতন মহলে ক্ষোভ দেখা দেয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও স্থানীয় সূত্রে জানাগেছে, গত দুই-তিনদিন ধরে তাহিরপুর উপজেলার উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের বিনোদপুর ও মন্দিয়াতা গ্রামের নিকটবর্তী ফইল্লার বিলের কান্দার হিজলবাগ থেকে শতাধিক গাছ এক্সোভেটর মেশিন দিয়ে কেটে ফেলেছে রতনপুর, বিনোদপুর ও মন্দিয়াতাসহ আশপাশের লোকজন। আরো পঞ্চাশটি গাছ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলেও জানা গেছে। টাক্সগুয়ার হাওরের এই হিজলবাগের গাছ কেটে বাগের ভিতর দিয়ে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণে জন্য উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের তেরঘর গ্রামের বাসিন্দা ইউসুফ মিয়া (৬২) ও রতনপুর গ্রামের গোলাপ নূর (৬০) কে দায়ী করছে এলাকা বাসী। এ বিষয়ে ইউসুফ মিয়া ও গোলাপনুর বলেন, আমাদের আশপাশের গ্রামগুলোর কৃষকরা এরাইল্লাকোনা হাওরে ধান রোপন করেছি। এ হাওরের ফসল রক্ষায় আমরা নিজ উদ্যোগে হিজলবাগের ভেতর দিয়ে রাস্তা করছি। তবে হিজলবাগের কোন গাছ কাটা হয়নি। টাক্সগুয়ার হাওর পাড়ের মন্দিয়াতা গ্রামের বাসিন্দা সানজু মিয়া বলেন, টাক্সগুয়ার হাওরের ফইল্লার বিলের হিজলবাগ একটি দৃষ্ট নন্দন বাগ। মাছ ও পাখির অভয়াশ্রম এ বাগ। এখানে ফসলরক্ষা বাঁধ দেওয়ার প্রয়োজন নেই বিধায় এখানে কখনোই ফসলরক্ষা বাঁধ দেওয়া হয় না। কিন্তু বাঁধের নামে শতাধিক হিজলগাছ কেটে ফেলা হয়েছে। আরো অর্ধশতাধিক গাছ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হাওর বাঁচাও আন্দোলন তাহিরপুর উপজেলা কমিটির আহবায়ক সাইদুল কিবরিয়া বলেন, হিজলগাছ বর্ষায় মাছ ও পাখির আশ্রয়স্থল হিসাবে কাজ করে। মাছের প্রজনন ও খাদ্য জোগানেও হিজলগাছ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এই হিজলবাগটি টাক্সগুয়ার হাওরের মাছের একটি নিরাপদ আবাসস্থল। টাক্সগুয়ার হাওরের এই গুরুত্বপূর্ণ হিজলবাগটি যারা ধ্বংসের চেষ্টা করছে তাদের আইনের আওতায় আনা হউক। পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি কাসমির রেজা বলেন, টাংগুয়ার হাওরে হিজল করচের বাগান ধ্বংস করে বাঁধ কেন? প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা এবং রামসার সাইট খ্যাত টাক্সগুয়ার হাওরে এক একটি হিজল করচের বাগান হতে সময় লাগে যুগের পর যুগ। কিন্তু হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধের নামে এসব হিজল করচের বাগান ধ্বংস করা হচ্ছে নিমিষেই। প্রকৃতির বিনাস সাধন করে টাক্সগুয়ার হাওরের মত নাজুক অঞ্চলে এমন অপকর্ম কোনোভাবেই কাম্য নয়। বাঁধ যদি দিতেই হয় পরিবেশের ক্ষতি না করে, হিজল করচের বাগান ক্ষতি না করে অন্যত্র থেকে মাটি আনতে হবে। যারা টাক্সগুয়ার হাওরে এইসব অপকর্মের সাথে জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানাই। তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সুপ্রভাত চাকমা বলেন, খোঁজ নিয়ে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।