ছাতকের চরভাড়া হাওরে প্রায় ২০ একর জমিতে বোরো আবাদ না হওয়ার আশঙ্কা

স্টাফ রিপোর্টার
ছাতক উপজেলার নোয়ারাই ইউনিয়নের চরভাড়া বন্দে (হাওরে) প্রায় ২০ একর জমিতে এবার বোরো চাষাবাদ না হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। স্থানীয় একটি পক্ষের বিরোধিতার কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। অথচ পতিত কিংবা ফসলি জায়গা অনাবাদি না থাকার সরকারি নির্দেশনা রয়েছে। ফসল উৎপাদনের জন্য কৃষকরা ওই জমিতে চাষাবাদ করতে পারছেন না। এ অবস্থায় জেলা প্রশাসক ও ছাতক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে ব্যবস্থা গ্রহনের আবেদন করেছেন চরভাড়া গ্রামের বাসিন্দা সেচ মেশিন মালিক মঈন উদ্দিন। সম্প্রতি উপজেলা প্রশান উভয় পক্ষকে আলাদা আলাদা জমিতে পানি সেচের জন্য ভাটোয়ারা করে দিলেও হেলাল আহমদ নামের এক ব্যক্তির কারণে চাষাবাদের আওতায় আসছেনা মইন উদ্দিনের অংশে পড়া জমি। হেলাল তার নিয়ন্ত্রনাধীন জমি প্রতিপক্ষের অংশে পড়ায় আবাদ করতে চাচ্ছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, চরভাড়া গ্রামের হাওরে প্রায় ৩০ একর জমি রয়েছে। ২৬ বছর ধরে সে হাওরে বোরো সেন্টার ক্ষেতের জন্য সুরমা নদী থেকে সেচ মেশিন বসিয়ে পানি সরবরাহ ব্যবস্থা দিয়ে আসছেন প্রবাসী আমির উদ্দিনের বড় ভাই মইন উদ্দিন। তাদের পক্ষে আত্মীয় ছাতক পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডের বাঁশখলা গ্রামের বাসিন্দা মতছির আলীর প্রতি বছরই সেচ প্রকল্পে পরিচালনা করছেন। তিনি মেশিনের মাধ্যমে সুরমা নদী থেকে পানি উত্তোলন করে কৃষকদের জমিতে দিয়ে আসছেন। বিনিময়ে তিনি নির্দ্দিষ্টহারে ধান ও টাকা নিচ্ছেন। এতে কৃষকরা উপকৃত হয়ে আসছেন। কিন্তু এ বছর ওই সেচ মেশিনের পাশে আরেকটি সেচ মেশিন বসান চরভাড়া গ্রামের মৃত ইদ্রিছ আলীর ছেলে হেলাল আহমদ। তিনি ডিজেলের সাহায্যে সেচ মেশিন দিয়ে সুরমা নদী থেকে পানি উত্তোলন করে কৃষকদের জমিতে দিতে শুরু করেন। এ নিয়ে হেলাল আহমদের সাথে মঈন উদ্দিন ও মতছির আলীর বিরোধ দেখা দেয়। গত ১৫ জানুয়ারি হেলাল আহমদসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন মতছির আলী। তিনি তার অভিযোগে উল্লেখ করেন, ২৬ বছর ধরে বিদ্যুতের সাহায্যে সুরমা নদী থেকে পানি উত্তোলন করে বিভিন্ন জমির মালিকরা বোরো সেন্টার করে ফসলাদি ফলিয়ে আসছেন। এ বছর চাষাবাদের জন্য বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে আসলে বাঁধা দেন হেলাল আহমদ। গত ২৩ জানুয়ারি তাকে মারধর করা হয়। এ ঘটনায় হেলাল আহমদকে প্রধান আসামি করে ছাতক থানায় একটি লিখিত অভিযোগও দেন মতছির আলী। এ অবস্থায় কৃষকদের জমি চাষাবাদের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে সম্প্রতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার নূরের জামান চৌধুরী স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের মাধ্যমে মতছির ও হেলালকে কৃষকদের জমিগুলো দুই ভাগে ভাগ করে দেওয়া হয়। যাতে তারা কৃষকদের জমিতে পানি সরবরাহ করতে পারেন। কিন্তু মতছির আলী প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে জমিতে পানি দিয়ে আসলেও হেলাল আহমদের অংশের জমিতে হালচাষ বা ধানের চারা রোপন করা হচ্ছেনা। অভিযোগ উঠেছে সেচ মেশিন দিয়ে পানি দেওয়া জমিগুলোতে চাষাবাদ না করতে কৃষকদের বাধ্য করছেন হেলাল। এর মধ্যে মসজিদ ও মাদ্রাসার নামে কিছু জমি রয়েছে। যা ইজারা নিয়েছেন হেলাল। প্রতিপক্ষের অংশে তার নিয়ন্ত্রনাধীন জমি পড়ায় তিনি সেখানে চাষাবাদ করতে চাচ্ছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে মইন উদ্দিনের ছেলে রফিক মিয়া জানান, হেলাল আহমদের অংশে তাদের প্রায় ৩ একর জমি রয়েছে। তারা ওই জমিতে সেচ দিচ্ছেন। কিন্তু হেলালরা চাষাবাদ করছেন না। জমিগুলো পতিত রয়ে যাচ্ছে। গ্রামের জামাল উদ্দিন, এখলাছুর রহমান, মোজ্জামিলসহ একাধিক কৃষক জানিয়েছেন, মতছিরের অংশে প্রায় ২০-২২ একর জমি রয়েছে। মঈন উদ্দিনের আত্মীয় মতছির আলী তার অংশের জমিতে পানি দিলেও হেলাল আহমদসহ তার পক্ষের কৃষকরা চাষাবাদ থেকে বিরত রয়েছেন। অভিযোগ বিষয়ে হেলাল আহমদ বলেন, মতছিরের অংশে ওয়াছির আলী লন্ডনীর অনেক জায়গা রয়েছে। চাষের সময় অতিবাহিত হওয়ায় বর্গা চাষিরা চাষাবাদ করছেন না। তিনি বলেন, সময় সুযোগ পেলে এবং ধানের ছাড়া অবশিষ্ট থাকলে মতছিরের অংশের অন্যান্য জমিগুলো চাষাবাদ করা হবে। তিনি তার অংশে প্রায় ৯ একর জমিতে ধানের চারা রোপন করা হয়েছে বলে দাবি করেন। এ ব্যাপারে মতছির আলী জানান, তিন সাপ্তাহর বেশি সময় ধরে বিদ্যুতের সাহায্যে প্রকল্পে সেচ মেশিন দিয়ে সুরমা নদী থেকে পানি উত্তোলন করে আসছেন। এতে মাত্র ৫ জন কৃষক ধানের চারা রোপন করেছেন। এখানে অন্যান্য কৃষক ছাড়াও মসজিদ-মাদরাসা ও বেশি জমি রয়েছে মরহুম ওয়াছির আলী লন্ডনীর। এ জমিগুলো হেলাল আহমদের ইন্ধনে চাষাবাদ করা হচ্ছেনা। এতে তিনি আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। মঈন উদ্দিন বলেন, পাওয়ার পা¤প দ্বারা পানি উত্তোলনের মাধ্যমে ধান ফলানোর ক্ষেতে বাঁধা সৃষ্টি করে আসছেন হেলাল আহমদ গংরা। এ বিষয়ে তিনি গত ১৫ ফেব্রুয়ারি সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক বরাবরে লিখিত একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। বিরোধ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নূরের জামান চৌধুরী জানিয়েছেন, কোনো জমি অনবাদি থাকবে সেটা হয়না। স্থানীয় জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে এ বছরের জন্য তাদেরকে জমি ভাগ করে সেচের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। কারণ তাদের কারো অনুমোদন নেই। এক পক্ষ কেন আবাদ করতে চাচ্ছে না বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

নিউজটি শেয়ার করুনঃ