স্টাফ রিপোর্টার::
শীতের সকাল। কুয়াশ তখনো চারপাশে। তবে মিষ্টি রোদ উঁিক দিচ্ছে। এর মাঝেই শিক্ষার্থীরা আসতে থাকে অনুষ্ঠানস্থলে। কেউ কেউ শহর আবার কেউবা এসেছে দূর্গম হাওরের গ্রাম থেকে। তাঁদের সরব উপস্থিতিতে ব্যানার-ফেস্টুন ও রঙিন পতাকায় সাজানো-গোছানো অনুষ্ঠানস্থল আরও প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। সবাই মেতে ওঠেন আনন্দ আয়োজনে। সুনামগঞ্জে শিখো-প্রথম আলো’র এবারে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের চিত্র এমনই ছিল। কথা, গান, নৃত্য, কুইজ সবই ছিল অনুষ্ঠানে। সুনামগঞ্জ পৌর শহরের জেলা শিল্পকলা একাডেমির হাছন রাজা মিলনায়তনে শনিবার এই অনুষ্ঠান হয়। সকাল আটটা থেকে আসতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। সঙ্গে আসেন অভিভাবকেরাও। নির্ধারিত চারটি স্টল থেকে তাঁরা সংগ্রহ করেন সনদ, ক্রেস্ট, উপহার ও নাস্তা। সকাল সাড়ে নয়টায় বন্ধুসভার সদস্যদের জাতীয় সংগীত পরিবেশনার মধ্য দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে বক্তারা শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, জিপিএ-৫ পাওয়া একটা প্রাপ্তি, তবে সব কিছু নয়। এটা শুরু, শেষ নয়। তাই জীবনে হতাশ হওয়া যাবে না। আশা নিয়ে এগিয়ে পেতে হবে। অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ রজত কান্তি সোম, সাবেক অধ্যক্ষ পরিমল কান্তি দে, প্রথম আলোর যুগ্মসম্পাদক সোহরাব হাসান, জেলা রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান পীর, সুনামগঞ্জ সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সদস্য কানিজ সুলতানা, দৈনিক সুনামগঞ্জের খবরের সম্পাদক পঙ্কজ কান্তি দে। সংবর্ধিত শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বক্তব্য দেন শাহরিয়ার আহমদ, নিবিড় কুমার মোদক, পূর্ণা তালুকদার, মুসলিমা লিজা ও ফাতেমা তুজ জোহরা। প্রথম আলোর এবারের আয়োজনে সহযোগিতা করছে ফ্রেশ, এটিএন বাংলা ও প্রথম আলো বন্ধুসভা। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বন্ধুসভার উপদেষ্টা মো. রাজু আহমদ ও সদস্য তাজকিরা হক। স্বাগত বক্তব্য দেন সুনামগঞ্জে প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক খলিল রহমান। অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন পঙ্কজ রায়, মনিকা দাস ও অভিজিত তালুকদার। নৃত্য পরিবেশন করেন বন্ধুসভার মৌমিতা বিশ্বাস, মৌলি তালুকদার, সুইটি সূত্রধর। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ রজত কান্তি সোম তাঁর বক্তব্যে বলেন, হতাশা, সংকীর্ণতা যেন মনে জায়গা করে নিতে না পারে। আমাদের সন্তানেরা দেশকে আরও এগিয়ে নেবে। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, দেশকে ভালোবাসতে হবে, সব মানুষকে ভালোবাসতে হবে। নিজেকে সৎ রাখতে হবে। আমি কি জানি আর কি জানিনা সেটা জানাও জরুরি। অধ্যাপক পরিমল কান্তি দে বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে এই বাংলাদেশ অর্জিত হয়েছে। তাই আমরা কখনো হারব না। দেশকে দুর্নীতি মুক্ত করতে হবে। আজকের শিক্ষার্থীরাই এই দেশকে এগিয়ে নেবে। মতিউর রহমান পীর শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, প্রথম আলো তোমাদের সাফল্যের স্বীকৃতি দিয়েছে। আমরা প্রথম আলোকে ভালোবাসি। তোমাদের অনেক দূর যেতে হবে। সফল মানুষ হতে হবে। দেশের প্রতি, মানষের প্রতি যে ঋণ আছে সেটি একদিন শোধ করতে হবে। সোহরাব হাসান বলেন, আমরা যেমন বাংলাদেশের জয় দেখতে চাই, তেমনি প্রতিটি মানুষকে জয়ী দেখতে চাই। প্রথম আলো জয়ের কথা বলে, প্রেরণার কথা বলে। প্রথম আলো শুধু সংবাদপত্র নয়, একটি প্রতিষ্ঠান। অনুষ্ঠানে জেলায় এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়া ৩২৬জন শিক্ষার্থী অংশ নেন। জেলা দুর্গম হাওর এলাকা থেকে এসে অংশ নেন মৌমিতা সরকার। মৌমিতা জানান, শাল্লার গোবিন্দ চন্দ্র সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় থেকে এবার তিনি এসএসসি পাস করেছেন। এখন ভর্তি হয়েছেন সিলেট সরকারি মহিলা কলেছে। অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার জন্য একদিন দিন চলে এসেছেন সুনামগঞ্জে। অনুষ্ঠানে আসতে পেরে খবুই ভালো লাগছে তার। তাহিরপুর উপজেলার টাঙ্গুয়ার হাওরপাড়ের বাসিন্দা শিক্ষার্থী ফয়সল আহমদ, তার আরেক বন্ধ আল জাবিরও অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন। ফয়সল বলেন, অনুষ্ঠানে এসে বেশ ভালো লাগছে। অনেক গুণীজনের কথা শুনছি। প্রথম আলো-শিখো আমাদের উপহার দিয়েছে। তাদের ধন্যবাদ। জামালগঞ্জ উপজেলা শিক্ষার্থী রোদশী আনজুম ও নৌশনি নূর আফিন্দিও অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পেরে আনন্দিত বলে জানায়।