স্টাফ রিপোর্টার ঃ
আমার স্বামী ছিল নির্লোভ, নেই মাথাগোঁজার ঠাই। আমার স্বামী ভোকেশনাল স্কুল এন্ড কলেজে চাকুরী করার সুবাদে ২০০৬ সালে বিয়ে হয়। বিয়ের পর ৪ বছর সংসার করেছি ভোকেশনালের কোয়াটারে। এরপর থেকে আমার বাবার বাসাতেই সন্তানদের নিয়ে থাকতাম। আমার স্বামী বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গিয়ে যা রুজি করতেন তা দিয়েই ছেলেদের পড়াশুনার খরচ, শাশুরী ও আমার ভরনপোষন করতেন। আমিও শশুর বাড়ীতে আসা-যাওয়া করতাম। শিমুলতলায় স্থায়ীভাবে থাকা হয়নি। সুনামগঞ্জ শহরের পশ্চিম হাজিপাড়া আমার বাবা ছাইফুল ইসলামের ভারাটিয়া বাসায় আসা-যাওয়া করতেন। গেল ঈদে ছেলেদের পোষাক কেনে দেন। আমাকে জামা কেনার টাকা দিয়েছেন। আমার আব্বা- আম্মাকের ঈদের জামা কিনে দিয়েছেন। সংসার জীবনের ১৮ বছরে একবার অভিমান করেছিলেন, যা একমাস স্থায়ী ছিল। পরবর্তীতে ঠিক হয়ে যায়, কোন সমস্যা হয়নি মিলে মিশে সংসার করছিলাম। ছাতকে ঈদের জামাত পড়ে শশুরবাড়ি সুনামগঞ্জে ছেলেদের নিয়ে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে শশুরবাড়ি চলে আসেন। টানা তিনদিন শশুরবাড়ি থেকেই শহরের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহণ করেন। হঠাৎ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন আমার স্বামী। রাস্তায় পড়ে থাকা নিহতের লাশ গ্রহন করে ছাতকের বাড়িতে নিয়ে যান আমার ভাইয়েরা । আমার বড় ছেলে জিনান শহরের মদনীয়া মাদ্রাসায় হাফিজী পড়াশুনা করছে। ছোট ছেলে জিনান সরকারী জুবলিী উচ্চ বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেনিতে পড়াশুনা করে। ছোট ছেলে জিহানকে গানের চর্চা করাতেন, তাকে শিল্পকলায় ভর্তি করেছিলেন। স্বামী মারা যাওয়ায় আমি এখন অসহায়। দুই সন্তানের পড়াশুনার খরচসহ কিভাবে চলবো কান্নাজড়িত কন্ঠে প্রতিবেদকের সাথে গতকাল সন্ধ্যায় ফোনে কথাগুলো বলছিলেন নিহত বাউল শিল্পী পাগল হাসানের স্ত্রী লুৎফা বেগম। পাগল হাসানের ছেলে জিহান ও জিনানের মামা রুবেল জানান, দুলাভাই ছোট ছেলেকে বেশি আদর করতেন। তাকে বলতেন আমি যদি মরে যাই মোবাইলের বিভিন্ন ফাংশন দেখিয়ে দিতেন। কিন্ত বাপের রেখে যাওয়া গানের খাতা ও মোবাইল সন্তানদের হাতে দিচ্ছেন না তার ফুফুরা। এদিকে গণমাধ্যমকর্মীরা পাগল হাসানের স্ত্রী’র সাথে কথা বলতে দিচ্ছে না শশুরবাড়ির লোকজন।